|| সুমন সওদাগর ||
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যে কোন উপায়ে দিনলিপি সংরক্ষণ করতে চাইতো। পাথর, পশু-পাখির চামড়া, গাছের গায়ে, পাতা, পাথর এবং পরবর্তীতে সভ্যতার আলোয় কাগজ মাধ্যমে মানুষ তাদের এই সংরক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতো। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সময়। এই সময়ের ব্যবধানে দিনলিপি সংরক্ষণ আর কাগজে সীমাবদ্ধ নেই। এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় কম্পিউটার আবিষ্কারের পর মানুষ নিজ নিজ কম্পিউটারে নোট করে সংরক্ষন করতো। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত তরঙ্গের হাত ধরে এইতো সেদিন দিনলিপি সংরক্ষণ চলে এলো ভার্চুয়াল জগতে। সুযোগ বুঝে মানুষও নিজ জীবনকে আরো বৈচিত্রময় এবং সমৃদ্ধ করতে শুরু করলো ভার্চৃুয়াল ডায়রি সৃষ্টির স্বার্থকতায়। এ পক্রিয়ায় ১৯৯৭ সালে আমেরিকার জন বার্জার প্রথম এগিয়ে আসেন। তারই হাত ধরে একটি শব্দ আসলো ওয়েবলগ (Weblog)। ওয়েবলগ থেকেই মূলত: ব্লগ শব্দের উৎপত্তি। বাংলা ভাষায় ব্লগ শব্দটি ইংরেজী ব্লগ শব্দটিরই প্রতিশব্দ। প্রথমে কেবল ডায়রি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্লগিংয়ের সূত্রপাত হলেও এখন ব্লগ হয়ে উঠেছে সৃজনশীলতা প্রদর্শনের এক উর্বর ভার্চুয়াল স্পেস। যেখানে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবপেজকে নিজের মতো করে সাজিয়ে যা খুশি তাই লেখা যায়। ব্লগ লেখার পুরো প্রক্রিয়াটিকে ব্লগিং বলে। আর যিনি ব্লগ লিখে থাকেন, তাকে ব্লগার বলা হয়। অান্তর্জালে ব্লগাররা যে সম্পর্কের জাল বুনতে শুরু করেছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে ব্লগ সাইটের মাধ্যমে সর্বাধিক রিলেশনশীপ হওয়ার রেকর্ড হবে।
ওপেন ডায়রি নামক একটি ওয়েবসাইট সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে আমেরিকাতে ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। তাদের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের বছরই লাইভ জার্নাল, ডায়রি ল্যান্ড ইত্যাদি চালু হয়। তবে ইংরেজী ভাষায় ব্লগ সমৃদ্ধ হতে শুরু করে তারও অনেক পরে ২০০৩ সালে। আন্তর্জাতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমেরিকাতে যারা জার্নালিজমে আগ্রহী ছিলেন তারাই মূলত: ব্লগে শুধু ডায়রি লেখার ধারনাটি ভেঙ্গে দেন। আমেরিকা ইরাক আক্রমন শুরু করলে পুরো বিশ্বের সচেতন নাগরিকরা প্রতিবাদ শুরু করে। এর মধ্যে অনলাইনে প্রতিবাদের ভাষা ছিলো খুবই শক্তিশালী। ঐ সময় ইংরেজী ব্লগিংয়ে বিস্ফোরন ঘটে। প্রতিবাদীদের মধ্যে যারা ব্লগিংয়ের সাথে পরিচিত তারা সবাই সেই ওয়েবপেজ এ লিখতে শুরু করেন। যেটি পরে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার নজরেও আসে।
মার্কোস মুলিতসাস জুনিগা (Markos Moulitsas Zuniga) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা একজন ব্লগার। তিনি ইন্টরনেটের সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিক ব্লগসাইট দ্য ডেইলি কোজ (The Daily Kos) এর জনক। মার্কোস যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের কর্মী এবং তিনি মূলত বামপন্থী বা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারা সমর্থন করে থাকেন যা ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন পাঠকদের কাছে তুলে ধরেন এবং প্রতিক্রিয়া আহবান করেন। আরেক বিখ্যাত এল ব্লগারের নাম শন এম ক্যারল (Sean M. Carroll) একজন তাত্ত্বিক মার্কিন ভৌত রসায়নবিদ। তিনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। কৃষ্ণশক্তি ও সাধারণ আপেক্ষিকতার বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত এই বিজ্ঞানী কসমিস ভ্যারিয়েস নামক একটি পদার্থবিজ্ঞান ব্লগ লিখে থাকেন।
২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গের দেবাশীষ ও সুকন্যা বাংলা ভাষায় অনলাইন ব্লগিং শুরু করেন এবং পরিচিতজনদের ব্লগিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন বাংলা ভাষায় ব্লগিং করাটা খুবই ঝামেলার ছিলো। ফন্ট সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকেই ব্লগিংয়ে আগ্রহী হতেন না। এখনও সে সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি। ২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” বাংলাদেশী ব্লগসাইট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। হাসিন ও এমরান এমবেডেড এডিটর ব্যবহার করে বাংলার প্লাটফর্ম সমস্যার সমাধান করে দেন। এখন ভার্চুয়াল কীবোর্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই ফোনেটিক বাংলা লেখা যায়। ২০০৬ সালে ব্লগটিকে ইউনিকোডে নিয়ে আসা হয়। মূলত তখনই একটি বিপ্লব ঘটে যায়। আকর্ষনীয় ইন্টারপেস এবং চমৎকার সব সুবিধার জন্য ব্লগারদের মন জয় করে নিতে সময় লাগেনি “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” এর। বর্তমানে বাংলা ভাষায় আরও কয়েকটি ব্লগ সাইট আছে। এগুলোর মধ্যে আমার ব্লগ, সচলায়তন, না বলা কথা, আমাদের কথা, গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন, ও নির্মাণ অন্যতম।
অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্লগ সাইট চালু হলেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তুলনায় তা অনেক কম। অবশ্য মোট জনসংখ্যার অতিক্ষুদ্র একটি অংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বিনোদনের মাধ্যম বা অবসরের সঙ্গী যাই বলি না কেন, সৃজনশীলতা বা সুস্থবুদ্ধির প্রকাশের জন্য ব্লগিং একটি উন্নত রূচির মাধ্যম। যদিও বাংলাদেশের ওয়েব সাইট গুলোর মধ্যে পর্নোগ্রাফি ভিত্তিক সাইট গুলোই বহুল জনপ্রিয়। ব্লগারদের মতে বর্তমানে অন্তর্জালে একটি সতস্ত্র ব্লগ কালচার চালু হয়েছে, যেটা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কেন্দ্র করেই। তবুও নিরাশ হয়েই বলতে হয়, বাংলা ব্লগ সাইটগুলোতে এখন পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। ব্যক্তিগত আক্রমন, ধর্মভিত্তিক পাল্টাপাল্টি সমালোচনার ফাঁকে পড়ে সৃজনশীল প্রয়াসগুলো অনেক সময় ব্লগারদের নজরেই আসে না। তাই প্রথমদিককার অনেক ভালো ব্লগার এখন আর নিয়মিত নন। এটা সমস্যা সাময়িক। ব্লগারদের অনেক ভালো প্রয়াসের কাছে এ সমস্যাগুলো বড় কোন বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। বাংলা ব্লগ সাইটে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতে ব্লগারদের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পক্রিয়ায় অনলাইন মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্লগ সাইট গুলোই ছিলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অনেক তথ্যবহুল লেখা, বিচারের জন্য আইনের বিশ্লেষন, যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাসহ ব্যাপক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ কয়েকজন ব্লগার মিলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ব্লগ নিয়ে ফিরে দেখা একাত্তর নামক একটি ই-বুক প্রকাশ করে। যা এযাবৎ কালের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শ্রেষ্ঠ অনলাইন প্রকাশনা।
একটি ব্লগ সাইটে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সাহিত্য, খেলাধুলা, যৌন জ্ঞান, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলাসহ আরও নানান বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে। একজন ব্লগারের একটি লেখায় পাঠকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট লেখকের সৃজনশীলতাকে গতিময় করে তোলে। নির্দিষ্ট একটি ওয়েবপেজ এ যখন একজন ব্যবহারকারী একটি দেশের বা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাম্প্রতিক ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে এবং খুব সহজেই সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তখন আমরা নিশ্চিতভাবে ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগারদের এই প্রয়াসকে ‘শুভ’ বলতে পারি। শুভ ব্লগিং!
কয়েকটি বাংলা ব্লগসাইটের ওয়েব লিংক:
http://amarblog.com/
http://www.somewhereinblog.net/
http://sachalayatan.com/
http://bn.globalvoicesonline.org/
http://www.drishtipat.org/bangla/
http://www.banglablog-narijibon.blogspot.com/
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যে কোন উপায়ে দিনলিপি সংরক্ষণ করতে চাইতো। পাথর, পশু-পাখির চামড়া, গাছের গায়ে, পাতা, পাথর এবং পরবর্তীতে সভ্যতার আলোয় কাগজ মাধ্যমে মানুষ তাদের এই সংরক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতো। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সময়। এই সময়ের ব্যবধানে দিনলিপি সংরক্ষণ আর কাগজে সীমাবদ্ধ নেই। এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় কম্পিউটার আবিষ্কারের পর মানুষ নিজ নিজ কম্পিউটারে নোট করে সংরক্ষন করতো। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত তরঙ্গের হাত ধরে এইতো সেদিন দিনলিপি সংরক্ষণ চলে এলো ভার্চুয়াল জগতে। সুযোগ বুঝে মানুষও নিজ জীবনকে আরো বৈচিত্রময় এবং সমৃদ্ধ করতে শুরু করলো ভার্চৃুয়াল ডায়রি সৃষ্টির স্বার্থকতায়। এ পক্রিয়ায় ১৯৯৭ সালে আমেরিকার জন বার্জার প্রথম এগিয়ে আসেন। তারই হাত ধরে একটি শব্দ আসলো ওয়েবলগ (Weblog)। ওয়েবলগ থেকেই মূলত: ব্লগ শব্দের উৎপত্তি। বাংলা ভাষায় ব্লগ শব্দটি ইংরেজী ব্লগ শব্দটিরই প্রতিশব্দ। প্রথমে কেবল ডায়রি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্লগিংয়ের সূত্রপাত হলেও এখন ব্লগ হয়ে উঠেছে সৃজনশীলতা প্রদর্শনের এক উর্বর ভার্চুয়াল স্পেস। যেখানে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবপেজকে নিজের মতো করে সাজিয়ে যা খুশি তাই লেখা যায়। ব্লগ লেখার পুরো প্রক্রিয়াটিকে ব্লগিং বলে। আর যিনি ব্লগ লিখে থাকেন, তাকে ব্লগার বলা হয়। অান্তর্জালে ব্লগাররা যে সম্পর্কের জাল বুনতে শুরু করেছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে ব্লগ সাইটের মাধ্যমে সর্বাধিক রিলেশনশীপ হওয়ার রেকর্ড হবে।
ওপেন ডায়রি নামক একটি ওয়েবসাইট সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে আমেরিকাতে ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। তাদের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের বছরই লাইভ জার্নাল, ডায়রি ল্যান্ড ইত্যাদি চালু হয়। তবে ইংরেজী ভাষায় ব্লগ সমৃদ্ধ হতে শুরু করে তারও অনেক পরে ২০০৩ সালে। আন্তর্জাতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমেরিকাতে যারা জার্নালিজমে আগ্রহী ছিলেন তারাই মূলত: ব্লগে শুধু ডায়রি লেখার ধারনাটি ভেঙ্গে দেন। আমেরিকা ইরাক আক্রমন শুরু করলে পুরো বিশ্বের সচেতন নাগরিকরা প্রতিবাদ শুরু করে। এর মধ্যে অনলাইনে প্রতিবাদের ভাষা ছিলো খুবই শক্তিশালী। ঐ সময় ইংরেজী ব্লগিংয়ে বিস্ফোরন ঘটে। প্রতিবাদীদের মধ্যে যারা ব্লগিংয়ের সাথে পরিচিত তারা সবাই সেই ওয়েবপেজ এ লিখতে শুরু করেন। যেটি পরে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার নজরেও আসে।
মার্কোস মুলিতসাস জুনিগা (Markos Moulitsas Zuniga) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা একজন ব্লগার। তিনি ইন্টরনেটের সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিক ব্লগসাইট দ্য ডেইলি কোজ (The Daily Kos) এর জনক। মার্কোস যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের কর্মী এবং তিনি মূলত বামপন্থী বা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারা সমর্থন করে থাকেন যা ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন পাঠকদের কাছে তুলে ধরেন এবং প্রতিক্রিয়া আহবান করেন। আরেক বিখ্যাত এল ব্লগারের নাম শন এম ক্যারল (Sean M. Carroll) একজন তাত্ত্বিক মার্কিন ভৌত রসায়নবিদ। তিনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। কৃষ্ণশক্তি ও সাধারণ আপেক্ষিকতার বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত এই বিজ্ঞানী কসমিস ভ্যারিয়েস নামক একটি পদার্থবিজ্ঞান ব্লগ লিখে থাকেন।
২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গের দেবাশীষ ও সুকন্যা বাংলা ভাষায় অনলাইন ব্লগিং শুরু করেন এবং পরিচিতজনদের ব্লগিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন বাংলা ভাষায় ব্লগিং করাটা খুবই ঝামেলার ছিলো। ফন্ট সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকেই ব্লগিংয়ে আগ্রহী হতেন না। এখনও সে সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি। ২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” বাংলাদেশী ব্লগসাইট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। হাসিন ও এমরান এমবেডেড এডিটর ব্যবহার করে বাংলার প্লাটফর্ম সমস্যার সমাধান করে দেন। এখন ভার্চুয়াল কীবোর্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই ফোনেটিক বাংলা লেখা যায়। ২০০৬ সালে ব্লগটিকে ইউনিকোডে নিয়ে আসা হয়। মূলত তখনই একটি বিপ্লব ঘটে যায়। আকর্ষনীয় ইন্টারপেস এবং চমৎকার সব সুবিধার জন্য ব্লগারদের মন জয় করে নিতে সময় লাগেনি “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” এর। বর্তমানে বাংলা ভাষায় আরও কয়েকটি ব্লগ সাইট আছে। এগুলোর মধ্যে আমার ব্লগ, সচলায়তন, না বলা কথা, আমাদের কথা, গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন, ও নির্মাণ অন্যতম।
অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্লগ সাইট চালু হলেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তুলনায় তা অনেক কম। অবশ্য মোট জনসংখ্যার অতিক্ষুদ্র একটি অংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বিনোদনের মাধ্যম বা অবসরের সঙ্গী যাই বলি না কেন, সৃজনশীলতা বা সুস্থবুদ্ধির প্রকাশের জন্য ব্লগিং একটি উন্নত রূচির মাধ্যম। যদিও বাংলাদেশের ওয়েব সাইট গুলোর মধ্যে পর্নোগ্রাফি ভিত্তিক সাইট গুলোই বহুল জনপ্রিয়। ব্লগারদের মতে বর্তমানে অন্তর্জালে একটি সতস্ত্র ব্লগ কালচার চালু হয়েছে, যেটা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কেন্দ্র করেই। তবুও নিরাশ হয়েই বলতে হয়, বাংলা ব্লগ সাইটগুলোতে এখন পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। ব্যক্তিগত আক্রমন, ধর্মভিত্তিক পাল্টাপাল্টি সমালোচনার ফাঁকে পড়ে সৃজনশীল প্রয়াসগুলো অনেক সময় ব্লগারদের নজরেই আসে না। তাই প্রথমদিককার অনেক ভালো ব্লগার এখন আর নিয়মিত নন। এটা সমস্যা সাময়িক। ব্লগারদের অনেক ভালো প্রয়াসের কাছে এ সমস্যাগুলো বড় কোন বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। বাংলা ব্লগ সাইটে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতে ব্লগারদের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পক্রিয়ায় অনলাইন মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্লগ সাইট গুলোই ছিলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অনেক তথ্যবহুল লেখা, বিচারের জন্য আইনের বিশ্লেষন, যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাসহ ব্যাপক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ কয়েকজন ব্লগার মিলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ব্লগ নিয়ে ফিরে দেখা একাত্তর নামক একটি ই-বুক প্রকাশ করে। যা এযাবৎ কালের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শ্রেষ্ঠ অনলাইন প্রকাশনা।
একটি ব্লগ সাইটে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সাহিত্য, খেলাধুলা, যৌন জ্ঞান, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলাসহ আরও নানান বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে। একজন ব্লগারের একটি লেখায় পাঠকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট লেখকের সৃজনশীলতাকে গতিময় করে তোলে। নির্দিষ্ট একটি ওয়েবপেজ এ যখন একজন ব্যবহারকারী একটি দেশের বা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাম্প্রতিক ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে এবং খুব সহজেই সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তখন আমরা নিশ্চিতভাবে ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগারদের এই প্রয়াসকে ‘শুভ’ বলতে পারি। শুভ ব্লগিং!
কয়েকটি বাংলা ব্লগসাইটের ওয়েব লিংক:
http://amarblog.com/
http://www.somewhereinblog.net/
http://sachalayatan.com/
http://bn.globalvoicesonline.org/
http://www.drishtipat.org/bangla/
http://www.banglablog-narijibon.blogspot.com/