সর্বশেষ

"সময় বড় নিষ্ঠুর ,বাবা"

সোহাগ সরকার, কলকাতা:
আমার নাম লক্ষ্মী হালদার। আমি নস্করহাটির (দক্ষিণ কলকাতা) কাছে থাকতাম। অনেক বছর। লোকের বাড়ি কাজ করতাম। তিন ছেলে দুই মেয়ে। দুই ছেলে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আমি ত্রিশ বছর এই কলকাতায় আছি, স্বামী রঙের কাজ করত। দশ বছর আগে মারা গেছে। সাত-আটশো টাকা ভাড়া দিয়ে আগে থাকতাম। সেখানে লাইট ছিল না। লম্ফ জ্বালাতাম।

ওখান থেকে যখন তুলে দিল, বড়ো ছেলে ফ্ল্যাট পেল এখানে। এই তো পেছনের বিল্ডিঙে। ওইটুকু ফ্ল্যাট। বড়ো ছেলে বউয়ের সংসারে থাকতে পারছিলাম না। সেখানে না খেয়ে শরীর খারাপ হয়ে শুয়ে থাকলেও ওরা কিছু জিজ্ঞেস করত না। ছেলে বউ সব মানুষ করে বুড়ো হলে এই হয়। কী বলব বলো বাবা। ছোটো ছেলে বলল, মা রোজকার এই অশান্তি ভালো লাগে না। মেজো ছেলে একটু দেখত। সে বিয়ে করে সোনারপুর চলে গেল। শ্বশুরবাড়ি থাকে। অনেক দূর। আমি তখন ছোটো ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম, আজ দু-বছর। রাস্তায় পড়ে থাকি তাও ভালো, থাকব না তোদের সংসারে। সেই তখন থেকেই এখানে এই কুঁজিটা করে আছি। বাপিদা চেনেন আমাকে অনেক দিন ধরে। আগে একবার ভেঙে দিয়েছিল। এই আরেকবার। এই যে কদিন ধরে ঘর ভেঙে দিয়েছে, ঝড়ে জলে পড়ে আছি, একবারও খোঁজও নেয়নি ওই ফ্ল্যাটে থাকা বড়ো ছেলে, বউমা।

ছোটো ছেলেটা বেশ ছোটো। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। ডেলির কাজ। যা পায় তাতে ভাড়ার পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। জোগালের কাজে দেড়শো টাকা পায়। সারাদিনের খোরাকিতে চলে যায় পঞ্চাশ টাকা। আর একশো টাকা থেকে ঘর ভাড়া খাওয়া হয়? আমি এখন আর কাজ করতে পারি না। অরুচি মুখে। শরীর অসুস্থ। হাই প্রেসার, হাতে পায়ে ব্যথা।

যেদিন তুলে দিল, সেদিন রাতে এখানেই ছিলাম। ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন তখনও এই কুঁজি তুলতে পারিনি। খোলা আকাশের তলায় ছিলাম। এখান থেকে নড়ব না। এখানেই মরব। আমাদের একটু এখানে থাকতে দিলেই হল। আমাদের অত লোভ নেই ফ্ল্যাটের। কোথায় যাব?

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.