এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, থানার বর্তমান ওসি জসিম উদ্দিন যোগদান করার পর থেকেই এলাকায় আশঙ্কাজনকহারে ডাকাতি বেড়ে গেছে। তাকে ফোন করলে সবসময় তিনি ফোনও রিসিভ করেন না।
স্থানীয়দের দাবি, স¤প্রতি এতগুলি ডাকাতি সংঘঠিত হওয়ার পরও পুলিশ এখন পর্যনন্ত উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি। মালামাল উদ্ধারতো দুরে থাক একজন ডাকাতও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। প্রতিরাতে ডাকাতরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে দিন দিন পুলিশ প্রসাশনের উপর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এলাকাবাসী। যে কোন মুহুর্তে জনগণের ক্ষোভ জনরোষে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকে।
জানা গেছে, ২১ মে শুক্রবার গভীর রাতে রামপুর ইউনিয়নে দু’প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ মুখোশপরা ডাকাতদল বাড়ীর লোকজনকে বেঁধে মারধর করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল সেট ও মূল্যবান ব্যবহারী সামগ্রীসহ ৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির শিকার ওই পরিবার সূত্রে জানা যায়, রামপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের বামনী শপিং সেন্টারের মালিক প্রবাসী সিরাজ মিয়ার বাড়ী থেকে ৫ ভরি স্বর্ণ, নগদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, ৭ টি মোবাইল সেট ও একই ওয়ার্ডে প্রবাসী কাশেম মিয়ার বাড়ী থেকে নগদ ৩২ হাজার টাকা, ৮শ সৌদি রিয়েল, মোবাইল ১টা ও ব্যবহারী সামগ্রীসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
অপরদিকে ১৯ মে বুধবার গভীর রাতে চরহাজারী ও রামপুর ইউনিয়নে ৪ প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল প্রবাসীদের স্ত্রী পুত্রদেরকে মারধর করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল সেট ও মূল্যবান ব্যবহারী সামগ্রীসহ ১২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। একই রাতে চরহাজারী ৩নং ওয়ার্ড প্রবাসী মিলনের নুতন বাড়ী থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ, ২টি মোবাইল সেট, নগদ ৫ হাজার টাকা ও মূল্যবান ব্যবহারী সামগ্রী, প্রবাসী মানিক মিয়ার নুতন বাড়ী থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ, ৪টি মোবাইল সেট, নগদ ১৫ হাজার টাকা, উত্তর রামপুর ৩নং ওয়ার্ড প্রবাসী আবদুল মিয়ার বাড়ী থেকে ২০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ১ লাখ টাকা, ৩টি মোবাইল সেট, প্রবাসী নুরুল হুদার বাড়ী থেকে ৫ ভরি স্বর্ণ, ৫টি মোবাইল সেট, নগদ ৬ হাজার টাকা ও মূল্যবান ব্যবহারী সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল।
৬ মে বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় রামপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সংঘবন্ধ ডাকাতদল একজন গ্রাম পুলিশসহ ৬জনকে কুপিয়ে আহত করে ৬লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আহতরা হলেন, রামপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ ফকির আহাম্মদ (৩৩), বামনীয়া বাজার জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মাওলানা আবদুল্লাহ (৪৫), মহি উদ্দিন টিপু (৩২), রৌশন আরা বেগম(৪৫), শিমুল (৮) ও শিউলি (১৮)।
ডাকাতিকৃত পরিবার সূত্রে জানাযায়, প্রবাসী হাজী রফিক মিয়ার বাড়ীতে ১৫/২০ জন ডাকাত দল ঢুকে পরিবারের সবাইকে বেধম মারধর করে ১৫ভরি স্বর্ণ, নগদ ১৫হাজার টাকা ও মূল্যবান ব্যবহারী সামগ্রীসহ ৬লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ৭ মে শুক্রবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয় নাই।
এ ছাড়া প্রতি রাতে এলাকায় ৪-৫টি বাড়িতে ডাকাতি ও বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, চুরি বৃদ্ধিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কোন তৎপর না থাকায় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে এসব ডাকাতির ঘটনায় থানায় কোন মামলাও হয়নি। ফলে ডাকাতরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জানাগেছে, কোথাও ডাকাতি হলে পুলিশ গিয়ে ডাকাতের বিরুদ্ধে নিজেরা ব্যবস্থা নিবে বলে মামলা না করার জন্য ওইসব পরিবারের সদস্যদের বলে আসে। তাছাড়া থানা এলাকার কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে কোন বাদি না থাকলে পুলিশ বাদি হয়ে ওইসব ঘটনায় মামলা দেয়ার বিধান থাকলেও সা¤প্রতিককালের এসব ঘটনায় আজো কোন মামলা থানায় নথিভুক্ত হয়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ নানান অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
রামপুরের ভুক্তভোগী প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের পুত্র ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের কাছে মনে হয় পুলিশ ডাকাতির সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। তা না হলে পুলিশ টহলের মধ্যেও প্রতিদিন দুর্ধর্ষ ডাকাতি হচ্ছে কিভাবে? অনেক সময় পুলিশকে ফোন করেও সময় মতো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। আর পুলিশ আসলেও সাইরেন বাজিয়ে টহল দেয় যাতে ডাকাতরা সতর্ক হয়ে নিরাপদে সরে পড়তে পারে। অন্যদিকে রাতের বেলায় ওসির হাতের সরকারি মোবাইলে কেউ ফোন করলে তিনি তা রিসিভও করেন না।
এলাকাবাসীরা জানায়, শুক্রবার রাতে বামনী ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক রফি উদ্দিনের বাজার সংলগ্ন বাড়িতে ডাকাতির সময় রামপুরের দায়িত্বে নিয়োজিত টহল পুলিশকে খবর দিলেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে সাইরেন বাজিয়ে আসে। জানাগেছে, ডাকাতির সময় টহল পুলিশ পেশকার হাট রাস্তার মাথায় অবস্থান করে। তাদেরকে ফোন করার পরও তারা ৫ মিনিটের রাস্তায় ১৫-২০ মিনিট দেরিতে আসে। তাও আবার ডাকাত দল উত্তর দিকে গেছে, পুলিশকে এ তথ্য দেওয়ার পরও টহল পুলিশ টিম সেই দিকে না গিয়ে কি কি খোয়া গেছে তার লিষ্ট নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খোয়া যাওয়া মালের লিষ্টের আগ্রহ দেখে মনে হয় পুলিশ যেন ডাকাতদের থেকে ওই জিনিষের ভাগ পাবে। আশ্চার্য্যরে বিষয় হচ্ছে, ঠিক সেই মূহুর্তে মাত্র ২০০ গজ উত্তরে আরেকটি বাড়ীতে ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশকে এ তথ্য জানানোর পরও পুলিশ তা মোটেও কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু পুলিশ স্থানীয় লোকদেরও সে দিকে যেতে দেয়নি। উপস্থিত লোকজন জানায়, পুলিশসহ সেদিকে গেলে হয়তো ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হতো।
এদিকে ১৪ মে তারিখে রামপুর ইউনিয়নে জনতার হাতে ডাকাত আটক হওয়ার পর বিক্ষুব্দ এলাকাবাসীর কাছে কোম্পানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ডাকাতদের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করছি, আপনাদের মতো আমরাও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না, আমাদের টহল ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছি। অচিরেই আমরা কোম্পানীগঞ্জ থেকে ডাকাতি র্নির্মূল করতে পারবো বলে আশা করছি।
কিন্তু ওসি জসিমের এ বক্তব্যের পর থেকে এলাকায় ডাকাতি আরও বেপরোয়াভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩/৪টি বাড়ীতে ডাকাতি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বর্তমান ওসি জসিম উদ্দিন থানায় যোগদান করার পর থেকে উপজেলার সর্বত্র চুরি ডাকাতি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। অনেক প্রবাসী এখন ডাকাতের ভয়ে বসুরহাট এসে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার নিজেদের মূল্যবান সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে। গত কয়েকদিন বসুরহাটের আশপাশে ডাকাতি হওয়ায় এখন আশ্রয় নেয়ার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছে না ভুক্তোভোগীরা।
এক প্রবাসী জানান, বিদেশ থেকে শখ করে পরিবারের লোকজনের জন্য বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার এনেছি। এখন স্বর্ণগুলো নিয়ে রাতের বেলায় ডাকাতের ভয়ে ঘুমাতে পারি না। তাই এসব স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে টাকা ব্যাংকে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া ডাকাতরা জিনিষপত্র লুটের পাশাপাশি পরিবারের মহিলাদের উপর নির্যাতন চালানোর ফলে সমগ্র এলাকায় এখন মহিলাদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এলাকায় ডাকাতি বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উল্যাহ বলেন, আমরা কেউই এখন আর নিরাপদ নয়, ডাকাতরা কিছুদিন আগে গ্রাম পুলিশ ফকির উল্যাহকে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করেছে। রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কামরুজ্জমান বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দাবি, এসব ডাকাতির ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের উপর চাপ বাড়ছে। পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার ফলে ডাকাতি বেড়েছে বলেও তারা জানান। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ও সকল নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওবায়দুল কাদের এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপার কথা বলার জন্য রোববার বিকেল ওসির মোবাইল (০১৭১৩৩৭৩৭৫২) নম্বরে ফোন করলে এসআই নূর হোসেন বলেন, ওসি সাহেব রেষ্টে আছেন। সন্ধ্যার পর ছাড়া পাওয়া যাবে না। সা¤প্রতিককালে ডাকাতির ব্যাপারে পুলিশ কি ব্যবস্থা নিয়েছে? জানতে চাইলে এ অফিসার বলেন, কোন দিন কোথায় ডাকাতি হয়েছে? কেউতো অভিযোগ করেনি। আর থানায় এ ব্যাপারেতো কোন মামলাও হয়নি।
- মোঃ শরফুদ্দিন শাহীন