সর্বশেষ

তিন বনদস্যুর দৌরাত্ম্যে অসহায় নোয়াখালীর উপকূলীয় হাতিয়া ।। জনজীবনে চরম আতঙ্ক

।। আবু নাছের মঞ্জু ও শাহেদুল ইসলাম সফিক।।

অব্যাহত অপরাধ কর্মকান্ডে নোয়াখালীর উপকূলীয় মেঘনা ও হাতিয়ার জনজীবনে চরম অশান্তি নেমে এসেছে। গত এক বছরে দস্যু-সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, হত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, উচ্ছেধ, দখলবাজি, নির্যাতন, ডাকাতি, চরদখল, বন উজাড়, চোরাচালানসহ নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনমনে উৎকন্ঠা লেগেই আছে। আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসিদেরও দিন কাটাতে হয়েছে অতঙ্কে।
      মহাজোট সরকারের গত চৌদ্দ মাসে জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা হাতিয়ার বয়ারচর, নলেরচর, ক্যারিংচর, ঢালচর, কালামচর ও নিঝুমদ্বীপ, বংলাবাজার, তরুদ্দি, সুবর্ণচর উপজেলাসহ চরাঞ্চলে বনদস্যু ও জলদস্যুদের উৎপাতে প্রায় ২ হাজার ভূমিহীন পরিবার নির্যাতিত হয়েছে। বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে প্রায় ১ হাজার পরিবার। জলদস্যু ও স্থানীয় ক্যাডারদের হামলায় ৫শ’ হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু জেলে পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছে। এসময় সীমানা পার হতে গিয়ে চরঈশ্বর বাংলা বাজারের জেলে দশরত জলদাস, সংকর জলদাস, রুহিনী জলদাস, অর্জুন জলদাস, মরনবালা জলদাস, জিকু জলদাস এবং নারী ও শিশুসহ প্রায় ৬৫জন গেছেন জেলে। চরাঞ্চলে কথিত বাহিনীদের হাতে অন্তত ৫‘শ পরিবারের ঘর-বাড়ি লুট করে উচ্ছেধ এবং হয়রানির শিকার হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। চিনতাই চাঁদাবাজি সন্ত্রাস ডাকাতি ও বাহিনীদের উৎপাত বেড়ে গেলেও প্রশাসন ছিলো নিরব। নির্যাতিতরা থানায় মামলা দিলেও রেকর্ড করা হতো না সে সব মামলা। গত ২ বছরে এখানে উৎপাত বেড়েছে কথিত বনদস্যুদের। তাদের মধ্যে বাশার মাঝি, মুন্সিয়া চোরা, কালা বাদশাহ, রবিন্দ্রবাহিনী, সুবর্ণচরের সুমন বাহিনী ও চরঈশ্বরের ইব্রাহীম বাহিনী, স্বন্দিপের মাসুদ, মনপুরার পিচ্ছি খোকা ছিল অন্যতম। ১৬ অক্টোবর শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা বাদশা পুলিশের সঙ্গে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হলেও থেকে যায় তার ক্যাডার বাহিনী। মেঘনার কুখ্যাত ইব্রাহীম ডাকাত চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে তার অস্ত্রভান্ডারসহ গ্রেফতার হলেও জামীনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় শুরু করেদেয় তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। গত ২০মে দস্যু ইব্রাহীম বাহিনী তারিখ দিয়ে দস্যু মন্সিয়া বাহিনীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধ করে। এসময় বনদস্যু বাশার মাঝি, অবস্থান নেয় মুন্সিয়া চোরার পক্ষে। অপর দিকে স্বন্দিপের মাসুদ ও মনপুরার পিচ্ছি খোকন অবস্থান নেয় ইব্রাহীম বাহিনীর পক্ষে। বন্ধুক যুদ্ধে ইব্রাহীম ডাকাত, সুমন বাহিনী ও মনপুরার পিচ্ছি খোকাসহ অন্তত উভয় পক্ষের ৩০ সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

      নোয়াখালী জেলার এক নং তালিকা ভুক্ত বনদস্যু সন্ত্রাসী চনাঞ্চলে বনদস্যু সম্রাট কুখ্যাত বনদস্যু বাশার মাঝি। সে হাতিয়ায় নয় জেলার সবছেয়ে বড় ত্রাস। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চরাঞ্চলে বিশাল অস্ত্র বান্ডার। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্ভর চনাঞ্চলে বনদস্যু নির্মূল অভিযানের সময় অর্ধশতাধিক বাহিনী ধরা পড়লেও ধরা পড়েনি দস্যু বাশার মাঝি। অভিযান পরবর্তী সময়ে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে সে। ভূমিহীনরা জানান, দস্যু বাশার মাঝি  এখন সরকার দলের ছত্রছায়ায় থেকে গোটা চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। তার বিরুদ্ধে হাতিয়া, মনপুরা, ভোলা ও চরজব্বর থানায় হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি ও অস্ত্র মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছে।

      এদিকে হাতিয়ার কালাম চরের অধিপতি কুখ্যাত ডাকাত কালা বাদশাহ ১৬ অক্টোবর পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর নতুন করে তার দায়িত্ব গ্রহণ কারে দুধর্ষ ডাকাত মুন্সিয়া চোরা। মুন্সিয়া চোরা কালাম চরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সবুজ বেস্টনী নিধন করে গড়েতোলে তার সশস্ত্র বাহিনীদের আস্তানা। দস্যু মন্সিয়া চোরার বিরুদ্ধে কোন কথা বললে তাকে স্বাস্তি পেতে হয় মুন্সিয়ার নিজ হাতে। এদিকে মুন্সিয়ার নিজ এলাকা চরচেঙ্গা বাজারের বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ীরা রয়েছেন আতঙ্কে। তার বিরুদ্ধে হাতিয়া, মনপুরা ও চরজব্বর থানাতে হত্যা, ডাকাতিসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে। তার বাড়ি স্থানীয় কোস্টগার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডার অফিসের আধাকিলোমিটার দক্ষিণে। মুন্সিয়ার নিজ এলাকার লোকজন জানান, সে প্রাই তার নিজ বাড়িতে থাকেন। প্রকাশ্যে সে এলাকায় গুরাপেরা করলেও পুলিশ তাকে রহস্য জনক ভাবে গ্রেফতার করছেনা। অথচ পলিশ বলছে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জাতিয় দৈনিকে বড়বড় সংবাদ প্রকাশিত হরেও এখন পর্যন্ত এদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে এসকল বনদস্যুদের সাথে থানা প্রশাসন ও কোষ্টগার্ডের নিরব সম্পর্ক রয়েছে। তারা বাহিনীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

      অপরদিকে মুল ভূ-খন্ডে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী, দখলবাজি, ছিনতাই জিম্মি করে মুক্তিপন আদায় ছিল তাদের মুখ্য বিষয়। গত একবছরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাত থেকে রেহায় পায়নি সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও। এমনকি হিন্দুদের মন্দিরেও হামলার মত ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে তাদের দ্বারা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা পুলিশ। এসকল কর্মকান্ডে বিভিন্ন সময় স্থানীয়সহ জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে তারা নেমে পড়ে পত্রিকা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।

      দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কে হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো. ওয়ালী উল্যাহর সাথে আলাপ করলে তিনি লোকসংবাদকে জানান, গত এক বছরে এখানে বনদস্যু, জলদস্যুসহ কথিত বাহিনীদের উৎপাত ছিল ঠিক। চরাঞ্চলে এসব বাহিনীদের দৌরাত্মের কারণে দ্বীপের মানুষ চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছে। তিনি আরো বলেন হাতিয়া উপজেলার আইন শৃঙ্খলার অবনতির ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত কালে তাকে অবহিত করেছি। তিনি শীঘ্রই এর ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

      হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, সন্ত্রাস, গডফাদারদের গ্রেফতারের আমাদের অব্যাহত চেষ্টা রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অব্যাহত চেষ্টা রয়েছে।

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.