আবু নাছের মঞ্জু
বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীতে অসহনীয় যানজট নিরসনের জন্য ফোর লেইন সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি প্রকল্প অনুযায়ী কাজ না করে সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে নিজেদের দোকানপাঠ রক্ষা করতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমান ঘুষ লেনদেনের বিষয়টিও এখন ওপেন সিক্রেট।
এছাড়া ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার পরও সরানোর হয়নি বিটিসিএল এর আন্ডাগ্রাউন্ড ক্যাবল এবং বিদ্যুতের পিলার। আবার বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকায় মূল্যবান এ ক্যাবল রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি পড়ে আছে। ফলে ভবিষ্যতে টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহে যেমন বিঘ্ন ঘটবে তেমনি এ সড়কে চলাচলকারী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ১১টি রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীর প্রধান সড়কের যানজট নিরসনে ৭০ ফুট প্রশস্তের চার লেইন সড়ক নির্মাণে ২০০৮ সালের শেষের দিকে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প একনেক অনুমোদন করে। প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী দুই পাশে ৬ ফুট করে ড্রেন, মাঝখানে ৩ ফুটের ডিভাইডার, ডিভাইডারের দুই পাশে ২৪ ফুট করে রাস্তাসহ ৬৩ ফুট, দ্ইু পাশের ড্রেন ব্যবহৃত হবে ফুটপাত হিসাবে এবং ড্রেনের বাইরে সাড়ে ৩ ফুট করে ৭ ফুট রাখা হয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের লাইন, ক্যাবল ও পিলার বসানোর জন্য। সেই আলোকে চৌমুহনীর চৌরাস্তা থেকে পূর্বদিকে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠান কামাল এসোসিয়েটস্। প্রকল্পে নির্ধারিত সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুটি ও টেলিফোন লাইন সরানোর জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইতোমধ্যে বিটিসিএলকে ১০ লাখ এবং পিডিবিকে ৩২ লাখ টাকা প্রদান করেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানায়, চার লেইন সড়কের কাজ শুরু হলেও বেশিরভাগ স্থানে রাস্তার দুই পাশে টেলিফোন লাইন ও বিদ্যুতের খুটি বসানোর জন্য নির্ধারিত সাড়ে ৩ ফুট করে জায়গা খালী রাখা হয়নি। অন্যদিকে ডেল্টাগেইট থেকে পূর্বদিকে সরকারি জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত চৌমুহনী পৌরসভার একটি টিনসেড মার্কেট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বহুতল ভবন রক্ষার নামে রাস্তার প্রশস্ততা কমে গেছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনমতে কাজ সেরে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে যানজট নিরসনের পরিবর্তে প্রতিদিন অসহনীয় যানজটে ভোগান্তীর শিকার হতে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে যাতায়তকারী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, মাদারীপুরসহ ১১টি রুট এবং নোয়াখালীর অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময়ে রাস্তাটি যখন ৯০ফুট প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত হয় তখন চৌমুহনীতে প্রায় দুই’শ দোকানপাঠ ভেঙ্গে ফেলে প্রশাসন। পরবর্তীতে অবশিষ্ট ব্যবসায়ীদের দোকানপাঠ রক্ষায় প্রশস্ততা ৭০ ফুট নির্ধারন করা হলে পৌরসভার মেয়র পৌর বানিজ্য বিতানের (টিনসেড মার্কেট) রাস্তার পাশ্ববর্তী প্রয়োজনীয় জায়গা (আড়াই রুম) ছেড়ে দেয়ার অঙ্গিকার করেন। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্য বিতান রক্ষার নামে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দোকান প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ৭০টি দোকান থেকে চাঁদা তুলে সড়ক ও জনপদ, স্থানীয় প্রশাসন ও নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান। এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে প্রশাসন রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা খালী করার উদ্যোগ নিলে একই সিন্ডিকেট করিমপুর রোডে রাস্তার দক্ষিণ পাশের দোকানপাঠ প্রতি ২২ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিটিসিএল’র নোয়াখালী বিভাগীয় কার্যালয়ের অবহেলা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনার কারণে মাটি কাটার এস্কাবেটর মেশিনের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে বিটিসিএল’র মূল্যবান আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল। বিভিন্ন স্থানে ক্যাবল জোড়া দিতে ব্যস্ত বিটিসিএল কর্মীরা। ফলে চৌমুহনী এক্সেচেঞ্জের সাড়ে চার হাজার গ্রাহককে চরম ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে। করিমপুর রোডে দুই পাশে কোন খালী জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি পড়ে আছে বিটিসিএল’র ক্যাবল। একইভাবে রাস্তার ওপর এবং ড্রেনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যুতের ফিলারও।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সামনেই ঠিকাদারের লোকজন ড্রেন নির্মাণের ঢালাইয়ে বড় বড় পাথর ব্যবহার এবং বালুর সাথে সামান্য সিমেন্ট ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কাজ করায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দেখার কেউ নেই। একই অবস্থা রাস্তার বর্ধিত অংশের নির্মাণ কাজেও।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যমল কান্তি ভট্টাচার্য্য প্রশস্ততা কমাতে ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন জায়গা খালী করে না দিলে তিনি কিভাবে কাজ করবেন। বারবার ধর্ণা দেয়ার পরও জায়গা খালী না করে যেটুকু আছে তাতেই কাজ করতে উল্টো তাঁকে অনুরোধ করা হয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন থেকে। তবে রাস্তা এবং ড্রেন নির্মাণে কোন অনিয়ম হলে তা ভেঙ্গে পুনরায় করা হবে বলে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ড্রেন, ডিভাইডার ও রাস্তা মিলিয়ে ৬৩ ফুটের। এরচেয়ে কম হলে কাজ গ্রহণ করা হবে না। যেহেতু টেলিফোন লাইন এবং বিদ্যুতের পিলার সরানোর জন্য টাকা দেয়া হয়েছে; এগুলো রাস্তার ওপর থাকতে পারবে না।
- আবু নাছের মঞ্জু