নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন এমনিতেই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলা সদরের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার অন্যতম এজেণ্ডা হিসেবে ঘুরপাক খাচ্ছিল বার বার। গত ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোসনার পর থেকে নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচনই এখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার মূল এজেণ্ডা হয়ে উঠছে। তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে যতটা তোড়জোড়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে এনিয়ে এখনো ততটা তোড়জোড় শুরু হয়নি। পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত হাফ ডজন নেতা নানা রকম প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছেন।
ঈদ, নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস সহ বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে এসব নেতাদের বর্ণিল ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড আর দেলায় লিখনও চলে অসছিল সমান্তরাল গতিতে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তফসিল ঘোষনার পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের কর্মী সমর্থকরা এসব বর্ণিল ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড এবং দেলায় লিখন অপসারনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চট্রগ্রাম বিভাগের অধীন নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৮ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৯ ডিসেম্বর, যাচাই-বাচাই ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহােের শেষ সময় ২ জানুয়ারি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাযায়, ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নোয়াখারী পৌরসভা ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় দুই লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই পৌরসভায় স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ৯ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ৪ বার আওয়ামীলীগ দলীয়, ৩ বার বিএনপি দলীয়, একবার জাতীয় পার্টির এবং একবার নাগরিক কমিটির ব্যানারে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মোস্তাক আহম্মদ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৭ সালে আবার আওয়ামী লীগ দলীয় সহিদ উদ্দিন এস্কেন্দার কচি, ১৯৭৯ সালে বিএনপি দলীয় মোস্তাক আহম্মদ, ১৯৮০ সালে বিএনপি দলীয় নুর নবী চৌধুরী, ১৯৮৪ সালে নাগরিক কমিটির ব্যানারে জাসদের ফজলে এলাহী, ১৯৮৯ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নুর নবী চৌধুরী, ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় রবিউল হোসেন কচি, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় আবদুর রহমান মঞ্জু এবং সর্বশেষ ২০০৪ সালে বিএনপি দলীয় হারুনুর রশীদ আজাদ চেয়াম্যান নির্বাচিত হন।
নোয়াখারী পৌরসভার এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়নে প্রার্থীতার জন্য প্রচার প্রচারনায় রয়েছেন-জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন আহমেদ কিরন, শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সাধারন সম্পাদক সহিদ উল্লাহ খান সোহেল, জেলা আওয়ামীলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শামছুদ্দিন জেহান, ব্যবসায়ী ফখরুল উসলাম মন্টু প্রমুখ। অন্যদিকে ব্যানার, পেস্টার, বিলবোর্ড কিংবা দেয়ার লিখনে না থাকলেও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত জননেতা আবদুল মালেক উকিলের ছেলে জেলা আওয়ামীলীগে সহ-সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন লাতুও দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহন করা না করার বিষয়টি এখই চুড়ান্ত না হলেও দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে মেয়র পদে জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মো. হারুনুর রশীদ আজাদের মনোনয়ন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ ব্যবস্থাপনা এবং জেলা শহরে একটি আধুনিক শিশুপার্ক করা সহ অনেকগুলো স্থায়ী সমস্যার পাশাপাশি নতুন নতুন নাগরিক সমস্যা ও সম্ভাবনার মধ্যে আবার নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন সমাগত। দশম বারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে পৌরবাসী তাদের অভিভাবক পৌর মেয়র নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। তাই নোয়াখালী পৌরসভার এবারের মেয়র নির্বাচনে ভোটারা যেমন অতীত অভিঞ্জতার আলোকে নানা হিসেব কষছেন, তেমনি সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়ে দলীয় মনোনয়ন লাভ এবং নির্বাচনে চুড়ান্ত জয়লাভের জন্য নানা হিসেব কষতে হচ্ছে।
- আবু নাছের মঞ্জু