আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নতুন একটি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কুপ খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। মঙ্গরবার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহজাদপুর গ্রামে সুন্দলপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পের এই কুপটি খনন কাজ উদ্বোধন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে-অনুসন্ধান কুপটিতে ১২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাঁচশ থেকে সাতশ বিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কুপটির খনন কাজ শেষ হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন- দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যে জ্বালানি খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী এই খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বিাজেটে এই খাতে সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন-বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ গড়তে হলে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা গ্যাস ও বিদ্যুতে সয়ংসম্পুর্ণ হলে আলোকিত বাংলাদেশ হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন-আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আমরা গর্ভ করি। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা উন্নত বিশ্বের ন্যায় উন্নতির শীর্ষ শিখরে পৌঁছে যাবো। প্রতিমন্ত্রী বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরকে দেশপ্রেম নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। জনগণনের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় করবেন না। প্রাকৃতিক সম্পদকে উৎপাদনশীল উন্নয়ন খাতে কাজে লাগান। বিগত সরকারের সমালচনা করে তিনি বলেন, তাদের শাসন আমলে গ্যাস, বিদ্যুতের অপচয় করা হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দূর্ণীতি করেছে তারা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক হোসেন মনসুর, বাপেক্সের ব্যবস্থপনা পরিচালন মর্তুজা আহমদ ফরুক, সুন্দলপুর গ্যাস অনুসন্ধান কুপ প্রকল্পের পরিচালক আবদুল হালিম, পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান, সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ছায়েদ।
সুন্দলপুর গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পের কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, বহুজাতিক কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি করপরেশন (বাংলাদেশ) প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর কুপটিতে গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে পেট্রোবাংলাকে রিপোর্ট দাখিল করে। ঐ রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এর পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্পটি খননের উদ্যোগ নেয়।
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ২০০৮ সালের ফেব্র“য়ারিতে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০০৮ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর অনুমোদন করে। তখন প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারন করা হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩০ মাস। প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর ২৫.৬ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা স্থানীয় মুদ্রায় এবং ৭৪.৩৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রায়। প্রকল্পের আওতায় কেয়ার্ন কর্তৃক চিহ্নিত এলাকায় ২ ডি সাইসমিক সার্ভে পরিচালনার মাধ্যমে আহরিত উপাত্ত ও নমুনা বিশ্লেষণ করে কূপ খননের স্থান চিহ্নিত করার পর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিটার (সাড়ে তিন কিলোমিটার) গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন এবং কূপ পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এ খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে কিনা তা চুড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে কারিগরি ও বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন লাভজনক বিবেচিত হলে উৎপাদন কূপ খনন এবং গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২ডি সাইসমিক সার্ভে শুরু করা হয় এবং ইতোমধ্যে এ সার্ভে কার্যক্রম শেষে হয়। সার্ভেতে প্রাপ্ত উপাত্ত ও নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই বাপেক্সের কারিগরি দল সাড়ে তিন কিলোমিটার গভীর অনুসন্ধান কূপ খননের স্থান চিহ্নিত করেছে। স্থান চিহ্নিতকরণের পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এবং কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কার্যক্রম করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কূপ খনন স্থানে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ ও খনন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ এবং কূপ খননের শুরু করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপন এবং জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে পাইপ লাইন স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্লান্ট ও পাইপ লাইন স্থাপনে আরও অতিরিক্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত হলে ২০১১ সালের শেষ নাগাদ জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। নোয়াখালীসহ দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক বিকাশে এ গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দেশের প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চল চট্টগ্রামের বিরাজমান তীব্র গ্যাস সঙ্কট নিরসনে সহায়তা করবে।
আরো তথ্যের জন্য:
প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম: ০১৭১৩৩৩৯৮৮৯
আবু ছায়েদ চেয়ারম্যান: ০১৮১৯৩৬২৩০৩
- আবু নাছের মঞ্জু