প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চরের মানুষদের আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্মিত বহুতল ভবনটি এখন তাদের কাছে আতংকের কারন হয়ে উঠেছে। বিপদের সময় ভবনটিতে চরবাসীর আশ্রয় নেয়া তো দুরের কথা; পাশদিয়ে চলাচলের সময় নাজানি ভবনটি কখন গায়ের উপর ধ্বসে পড়ে সেই ভয়ে তটস্থ থাকতে হচ্ছে আশপাশের মানুষগুলোকে।
ভবনটি হচ্ছে নোয়াখালী সদর উপজেলার আশ্বদিয়া ইউনিয়নের কালাচাঁদপুর মৌজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। বহু বছরের পুরো জরাজীর্ণ এই আশ্রয়কেন্দ্রটিকে ২০০৮ সালের ৮ জুন জেলা কনডেমনেশন কমিটি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছিল। তখন একই সাথে আশ্রয়কেন্দ্রটিকে বিপদজনক হিসেবে উল্লেখ করে এর আশপাশ দিয়ে জনসাধারণকে চলাচল না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সাইবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে বিগত আড়াই বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেলেও সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্রটিকে ভাঙার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রটির পাশেই রয়েছে কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক সময় আশ্রয়কেন্দ্রটির মধ্যেই ছিল বিদ্যালয়টি। আশ্রয়কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত ঘোষনার আগে লাগোয়া এক তলা একটি ভবনে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছিল। ফলে ঝুঁকিপূর্ন আশ্রয়কেন্দ্রটি একপাশ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা এবং অন্যপাশ দিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথ এবং সাথেই খেলার মাঠ হওয়ায় যেকোন মুহুর্তে ভবনটি ধবসে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিন আশ্রয়কেন্দ্রটির আশেপাশে ঘুরে দেখা যায়, তিন তলার এই ভবনটির অধিকাংশ পিলারের (কলাম) ইট-সুরকির ঢালাই খসে পড়েছে। পিলাগুলোর রড আলাদা হয়ে যাওয়ায় কেটে নিয়ে গেছে সুযোগ সন্ধানীরা। নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি ভেঙে পড়েছে অনেক আগে। দেয়াল ও ভীমের বিভিন্ন অংশে পলেস্তারা ও ঢালাইগুলো বড় বড় ফাঁটল ধরেছে। এরপরও ছাত্রছাত্রীরা ভবনটি নিচে দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে ঝুঁকি নিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হক জানান, যতদ্দুর মনে পড়ে বাহাত্তর-তিহাত্তর সালের দিকে এই আশ্রয় কেন্দ্র্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারিভাবে এটির পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা নিতে কখনো দেখেননি তাঁরা। ফলে দিনদিনে এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। প্রায়ই ইট-সুরকির ছোট-বড় ঢালাইয়ের খন্ড ভেঙে পড়তে দেখেন।
কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী হালিমা আক্তার জানায়, স্কুলে আসা যাওয়ার সময় এবং ক্লাসে বসলেও সবসময় তাদের ভয় লাগে। যদি ভবনটি ভেঙে স্কুলের কিংবা তাঁদের উপর পড়ে। কখন নিশ্চিত মৃত্যু।
সহকারী শিক্ষিকা আবেদা আক্তার ও শামীমা সুলতানা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রটির অবস্থা খুবই নাজুক। প্রায়ই ভবনের পলেস্তারা ও ইট-সুরকির খন্ড খসে পড়ে। স্কুলের পক্ষ থেকে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তাই সবসময় নিজেদের চেয়েও স্কুলের ৩৪০ জন ছাত্রছাত্রীর জীবন নিয়ে আমাদের ভয় এবং চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়।
খেতমজুর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কালাচাঁদপুরের পরিত্যক্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি ভাঙ্গার দাবি জানিয়ে গত ২২ ফেব্র“য়ারি জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছির। সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, পরিত্যাক্ত ঘোষিত আশ্রয় কেন্দ্রটির অবস্থা দেখে যেকেউই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আমাদের বিষ্মিত করছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলাম বললেন, ‘বিষয়টি সদর উপজেলা প্রশাসন দেখার কথা।’ আর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফা জামান বললেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।
ছবি ক্যাপশন: নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাচাঁদপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটির পাশেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চলাচলের রাস্তা
#
- আবু নাছের মঞ্জু