নোয়াখালীতে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাম্পার ফলনে কৃষদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। ইতিমধ্যে আবাদী জমির ফসলের ৯৮ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান কেটে মাড়াইয়ের পর সেদ্ধ করে শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে কৃষক পরিবারগুলো এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানযায়, চলতি মৌসুমে নোয়াখালী জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড হিরা, এসআই-১, চমক, সাথী, ও উফশী ব্রি-ধান-২৯, ৪৭, ৫০, ২৮ ও ১৪ বিআর-১৬ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চাষ হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৯০ হেক্টর, বেগমগঞ্জে ১৬ হাজার ২২৫ হক্টের, সেনবাগে ৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, চাটখিলে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর, কোম্পানীগঞ্জে ১ হাজার ৪ হেক্টর, সোনাইমুড়ীতে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর, সুবর্নচরে ১ হাজার ১০০ হেক্টর, কবিরহাটে ৪ হাজার ৮২৬ হেক্টর এবং হাতিয়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। চাষকৃত জমিতে বিআর ২৯ ও হীরা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কৃষক এনায়েত উল্যাহ জানান, তার ৩ একর জমিতে ধান চাষে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ১৪০ মন ফলন পেয়েছেন। যার মূল্য ৮৪ হাজার টাকা। সোনাইমুড়ী উপজেলার পদিপাড়া গ্রামের কৃষক পারভেজ আলম জানান, তিনি সাড়ে ৩ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। গত বোরো মৌসুমে তিনি ৬০ হাজার টাকা খরচ করে এ জমি থেকে ১৬০ মন ধান পেয়েছিলেন। এবার ৫০ হাজার টাকা খরচ করে একই জমিতে ১৭০ মন ধান ঘরে তুলেছেন। স্থানীয় বাজার মূল্যে এ ১৭০ মন ধানের দাম ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। যাতে তাঁর লাভ হয়েছে ৮৬ হাজার টাকা। বেগমগঞ্জের হাজীপুরের বশীর নগর গ্রামের কৃষক আবদুল গফুর জানান, তিনি ২ একর জমিতে ধান পেয়েছেন ১৬০ মন। একই কথা বলেছেন, সেনবাগের কাদরা গ্রামের কৃষক ফকির আহাম্মেদ, তারাও কম খরচে আশাতীত ফলন পেয়ে অধিক লাভবান হয়েছেন।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নৃপেন কুমার সরকার জানান, নোয়াখালীতে চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন ধান। এর বাজার মূল্য ৫ শত ৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। চাল উৎপাদন হবে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৮ মেট্রিক টন। এ চালের বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৮ শ ৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তবে তিনি জানিয়েছেন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদন হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে চাষকৃত হাইব্রিড ধান ঝলকের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। ফলন বিপর্যয় না ঘটলে আরো ৭ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। হাইব্রিড হিরা, এসআই-১, উফশী ব্রি-ধান, বিআর-১৬ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করে হাজার হাজার কৃষক আনন্দে থাকলেও জেলার ৬ হাজার ৯২৬ জন ক্ষতিগ্রস্থ ঝলক ধান চাষীদের ঘরে এখন শুণ্যতার হাহাকার। ক্ষতিগ্রস্ত এসকল কৃষকদের জন্য সরকার কিংবা বীজ কোম্পানির তরফ থেকে দেয়া হয়নি কোনো ক্ষতিপূরণ।
- আবু নাছের মঞ্জু