জনবল সংকট সহ নানা সমস্যায় নোয়াখালী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকেটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে বহু বছরের পুরনো সরকারি এই ক্লিনিক ভবটির অবস্থাও এখন নাজুক। জরাজীর্র্ণ ভবনটিতে বছরের পর বছর বিকল হয়ে পড়ে আছে মূল্যবান অনেক চিকিৎসা সামগ্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যক্ষা রোগ সনাক্তকরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালে সরকার জেলা শহরের মাইজদী বাজারের পশ্চিম পাশে নোয়াখালী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করে। একটা সময় পর্যন্ত জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ পার্শ্ববর্তী জেলা লক্ষীপুরের লোকজন এই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসতো। গত কয়েক বছর থেকে ক্লিনিকটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ অন্যান্য পদে লোক না থাকায় চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অন্য উপজেলায় কর্মরত দুজন চিকিৎসককে অস্থায়ীভবে সপ্তাহে তিনদিন করে এ ক্লিনিকে রোগী দেখার জন্য বাড়তি দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তারা কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবি করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন ভিন্ন কথা।
ক্লিনিকটির প্রধান কর্তাব্যক্তি জুনিয়র কনসালটেন্টের পদটি ৩ বছর থেকে খালি পড়ে আছে। গত এক মাস থেকে মেডিকেল অফিসারের পদটিও খালি হয়ে আছে। এছাড়া মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট, দুইজন লেডিহোম ভিজিটর, একজন সহ সেবক, একজন অফিস সহকারী, একজন এমএলএসএস ও একজন সুইপারের পদ খালি পড়ে আছে অনেক দিন থেকে।
সংস্কারের অভাবে বহু বছরের পুরনো দ্বিতল ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। লোনাধরা স্যাতস্যাতে ভবটির দরজা জানালা ভেঙ্গে পড়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। পলেস্তর খড়ে পড়ছে।
ক্লিনিকে দায়িত্বরত ডিপ্লোমা ব্রাদার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বর্ষায় ক্লিনিকের ভেতরে একহাটু পানি জমে থাকায় অনেকগুলো আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ছাঁদ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে কয়েক বছর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে অত্যাধুনিক ডিজিটার এক্সরে মেশিনটি।
ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট মো. জহির উদ্দিন ভূঞা জানান, ফার্মেসির জন্য নির্দিষ্ট কক্ষটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বারান্দার পাশের ছোট্র একটি কক্ষে এখন ফার্সেমির কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ক্লিনিকের পাশে জুনিয়র কনসালটেন্টের জন্য তৈরি বাসাটি বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কনসালটেন্টের গাড়িটি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিকল অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে।
ভারপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. কামাল উদ্দিন জানান, তিনি একজন চর্মরোগের বিকিৎসক। অথচ তাকেই সামাল দিতে হচ্ছে পুরো ক্লিনিক।
বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও জনবল সংকটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন খান।
সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে যক্ষা রোগীর সংখ্যা এবং এ রোগের কারণে মৃত্যৃ (১৯৯০ সালের তুলনায়) অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জনবল সংকট সহ অন্যান্য সমস্যাগুলো দূর করা গেলে নোয়াখালী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি সরকারের এ ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
- আবু নাছের মঞ্জু