সর্বশেষ

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর ও কমলনগরে ১১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।। কলাগাছ দিয়ে বানানো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়

মো. রাজীব হোসেন রাজু :
রায়পুর: জেলার রায়পুর উপজেলার ২৮টির মধ্যে ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তাই  এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই কলাগাছ দিয়ে বানানো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, কলাগাছ দিয়ে বানানো অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে তারা ইতস্ত বোধ করে কিন্তু উপায় নেই। স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানাতে খরচ হবে ৩০-৪০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা একটু আন্তরিক হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব।
রায়পুর এল কে এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের আশপাশের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর ২০ ফেব্রুয়ারি কলাগাছ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার তৈরি করি। পরদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করি। বিষয়টি খুবই খারাপ লাগলেও কিছুই করার নেই। চরলক্ষ্মী জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বিলাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য কোনো অর্থ আমাদের নেই। কলাগাছ দিয়ে বানানো শহীদ মিনারই ভরসা।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইসমাইল তারেক বলেন, শহীদ মিনার বানাতে আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় দাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ নিয়ে শিক্ষকদের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
কমলনগর:লক্ষ্মীপুর কমলনগরের ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই । অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবার ও কলাগাছের শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পন করবেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সূত্রে জানা যায়, কমলনগর উপজেলায় প্রাথমিক, নিন্ম মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ এবং ডিগ্রী (ফাজিল) পর্যায়ের সরকারী, বেসরকারী এবং রেজিঃ কিংবা কমিউনিটি মিলে সর্বমোট ৯৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ২ টি, রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯ টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭টি, মাধ্যমিক ১০টি, নিন্ম মাধ্যমিক ৬টি এবং দাখিল, আলিম ও ফাজিল মাদরাসা ১৪ টি। প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে শহীদ মিনার আছে চর মার্টিন নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, চরলরেঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়, উপকুল কলেজ, হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি এবং চর জাঙ্গালিয়া এস সি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বাকি ৯০ টি প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই অথবা শহীদ র্নিমাণের জন্য কোন সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগ ও নেই। ফলে এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবসের পূর্ব রাতে তৈরি করে কলাগাছে অস্থায়ী শহীদ মিনার। আর সকাল বেলায় প্রভাত ফেরির পূর্বে পুষ্পমাল্য দিয়ে নিবেদন করে শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। উপজেলার কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসা চত্বরে ভাষা দিবসের ৬১ বছরে ও র্নিমাণ হয়নি শহীদ মিনার । পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ৫২’র ভাষা সৈনিক ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার নামে প্রতিষ্ঠিত তোয়াহা’র স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ও নেই কোন শহীদ মিনার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জাহেদ বিল্লাহ জানান উপজেলা সদর হাজিরহাটে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহার সমাধির পাশেই তার স্ত্রী বেগম আরজাহান তোয়াহা ১৯৯২ সালে বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর ২১ বছর কেটে গেলেও আজও বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় মাতৃভাষা দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবসগুওলোতে ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টিতে শহীদ মিনার না থাকায় দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হাজিরহাট উপকূল কলেজে নির্মিত উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয় এ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের।প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শহীদ মিনার ছাড়া কিভাবে কোমলমতি শিশুদের কে ভাষার গুরুত্ব বুঝানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মাষ্টার মফিজ উল্লাহ বলেন, শুধু প্রাথমিক নয় উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত সরকারী কিংবা বেসরকারী ভাবে শহীদ মিনার স্থাপন করা জরুরী নতুবা আমরা সত্যিকার অর্থে ভাষার স্বাধীনতা বুঝতে সক্ষম হব না। আর কোমলমতি শিশুদের কে ভাষার গুরুত্বও সহজে বুঝাতে পারব না।উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম নাজিম উদ্দিন জানান, তোয়াহা’র স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে খুব শীঘ্রই একটি শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার র্নিমাণ বিষয়ে স্থানীয় উদ্যোগের প্রত্যাশা করছি।কিন্তু প্রশাসন যাই বলুক আগামী বছর ভাষা দিবসের আগেই কমলনগরের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কলাগাছের পরিবর্তে সত্যিকার শহীদ মিনারে ফুল দিবে এমনটি প্রত্যাশা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.