সর্বশেষ

রোহিঙ্গাদের হাতে নষ্ট হবে নোয়াখালী!

হা বী ব    ই ম ন

রোহিঙ্গাদের হাতে নষ্ট হবে নোয়াখালী!


ছোট্ট একখান শহর। এক রাস্তার শহর। শুনশান-শান্ত একটি শহর। সেই শহরের ছোট্ট একটি ছেলে আমি। যদি এ জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে পারি, এ শহরের মানুষগুলোর কাছে থেকে এ শিখেছি। আজ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে, বাস্তবতা-অবাস্তবতায় এ শহর থেকে অনেক দূরে এসেছি। কল্পনায়-আবেগে এখনো মন পড়ে থাকে এ শহরের দিকে। ছটফট করি কখন বাড়ি যাবো, কখন এ প্রিয় শহরে দাপিয়ে বেড়াবো, প্রিয় মুখগুলো শ্রীদর্শন হবে, অপেক্ষায় থাকি। 

এই আষাঢ়ে বৃষ্টিময় দিনের কথা মনে করি, আহা কদম ফুলের ছাট। এখন কী ছেলেরা কৈ মাছ কুড়ায়! এখনো ছেলেরা আম কুড়ায়, চুরি করে আম পাড়ে! ঘুড়ি উড়ে এই শহরে! কবে কীভাবে রূপকথা হয়ে উঠেছে এইসব, টের পাইনি। এখনও শহরে বৃষ্টি হয়। এখনও এ শহরে নিয়ম করে রোজ রোদ উঠে। রাস্তায় পানি উঠে। তবে শহরে প্রাণোচ্ছল পাই না। পানিতে রূপালি থৈ থৈ করে না। শহরে নোংরা জমে থাকে পানিতে, ইঁদুরের পচার সাথে আমার ছোট্ট ভাইটির লাশও যে একাকার। সত্যি বলছি এ পানির রং কালো, শত সহস্র আত্মার রং, যারা মিশে আছে একে একে। পাল্টে গেছে শহরটি। কেমন যেনো আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো, আত্মসুখ আবিস্কারে ব্যতিব্যস্ত কেউ কেউ। দুইদিন হয়নি যে যুবক সাংবাদিকতা করছে, সেও এখন ব্যস্ত, কচকচে পাঁচশত টাকার খামের জন্য সারাদিন সে লাপাত্তা।

মানুষের আটপৌরের ঘরের মধ্যে নতুন ঢেউ লেগেছে। তাদের মধ্যে জীবনযাত্রার নানান ভাবনা, নানান চিন্তা ঢুকে গেছে। শৈশবের সেই দিনগুলোর মতো নয়। শহরে নতুন নতুন দালান হয়েছে। নতুন নতুন মানুষ এসেছে। ইট-পাথরের শহরের কৃষ্ণজল সাগর বয়ে চলেছে অবিরাম মূল্যবোধের ক্ষেত্র, মূল্যবোধের জায়গা, মানবিকতা, সৌহার্দ্র্য, সম্প্রীতির স্থান এখন অনেকটা পাল্টে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় নৈতিকতা চুকে গেছে। প্রবাসীদের কষ্টের টাকায় এ শহরের কিছু মানুষ সামাজিক সুনীতি নষ্ট করছে। পুরনো মানুষগুলো এখন অনেকটা জীর্ণকায়।
এ শহরের তরুণরা এখন সুস্থির আদর্শের রাজনীতি করে না, কতিপয় নেতার রাজনীতিতে বুঁদ হয়ে গেছে। একদা এ শহরে নেতাদের মধ্যে রাজনীতি ছিল, আদর্শের লড়াই ছিল। যে মানুষটিকে দেখেছি আজীবন সাহিত্য-সংস্কৃতি করে করে এপথ ওপথ মাড়িয়েছে, মেতে থাকতো, সেও এখন পাল্টে গেছে। যে মানুষটিকে দেখেছি কমিউনিজমের কথা বলতে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে, শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলতে দেখেছি, সে মানুষটিও এখন রূপান্তরিত আলোর ঝলকানিতে এইসব শোষিত মানুষের পক্ষে জ্বলে উঠে না। এঁরাই তো আমার শৈশবের নায়ক ছিল। এ শহরটিকে পা রাখলে ওদের অস্তিত্ব খুঁজি, মুক্ত জলাশয়ের মতো ওঁরাও কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। তবে কী ‘যেদিন চলে গেছে, সেদিন ফিরে আসবে না’! এ শহরের মানুষগুলো এখন আর কবিতাকে ভালোবাসে না। পূর্ণিমার কথা মনে করে না। শহরের সোডিয়াম লাইট তাদের এখন অনেক আপন হয়ে গেছে। আমাদের সময়ে যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখেছি, তা এখন কোথায়!

এখনও আছে কিছু মানুষ, নিভু নিভু হয়ে জ্বলে আছে। সংখ্যা এঁরা এখন নিতান্ত কম। দেখা যায় না ওদের। নতুন এই দিনে নিজেকে বেমানান অস্পষ্ট মনে করে ওঁরা। ওদের কথা কেউ মনে রাখে না। হয়তো আমিও মনে রাখি না।

দুই.
নোয়াখালীতে এখন নতুন মানুষদের রাখার ব্যবস্থা চলছে। রোহিঙ্গারা থাকবে এ শহরে। কেউ কেউ জাতিসংঘের টাকা ছাড় করতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে তোড়জোড় করছে। মানবতার দোহাই দিয়ে চলছে এরা। কিন্তু এখানে মানবতা হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি, নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। শরনার্থী পুনবার্সন সমস্যা স্থায়ী হতে পারে না। একসময় ফিলিস্তিনীরা ইসরায়েলীদের আশ্রয় দিয়েছিল। সেই ইসরায়েলীদের হাতে ফিলিস্তিনীরা ধ্বংস হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার অংশ ঠ্যাংগার চরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গঠনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

কক্সবাজারে এরা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক বিশেষ করে ইয়াবা, মানবপাচার, মহাসড়কে চুরি-ডাকাতিসহ নানা প্রকার অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এলাকার অনেকে বিশেষ করে চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাত্রছায়া ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় স্বার্থ হাসিলের কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অনেকে স্থানীয়দের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে বিবাহবন্ধনের দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। হরকাতুল জিহাদের ধর্মান্ধ জঙ্গিদের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে। ওরা অস্ত্রধারী হওয়া, ইসলামী জঙ্গিদের সঙ্গে আঁতাত ও তাদের শিবিরে তরুণদের জঙ্গিপনার প্রশিক্ষণ এদের ভেতর আছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট তৈরি করছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকের অপরাধপ্রবণতার কারণে স্থানীয় জনগণের সাথে নানা প্রকার সংঘাত লেগেই থাকে। সেখানকার রাজনীতিতে ওরা প্রভাব বিস্তার করছে।

বিগত শতাব্দিতে নদী ভেঙে ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিল নোয়াখালী শহরটি। শহরের সমস্ত সৌন্দর্য্য ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। কে বলবে আজ একদা এ শহরের সৌন্দর্য্যের কথা। কে বলবে আজ এ শহরের সুরম্য বাড়িগুলোর কথা। কে বলবে এ শহরে একদা ঘোড়ার গাড়ি চলতো। ঘোড়ার দৌড় হতো এখানে। কে বলবে এখানে লাল ইটের রাস্তা ছিল। নেইÑনেই কিছু নেই। তবুও এ শহরের মানুষ আবার বাঁচার জন্য গড়েছে পুরাতন স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে। প্রতিবছর এ শহরের দক্ষিণে সাড়ে ১২ বর্গ কিলোমিটার ভূমি যুক্ত হচ্ছে। উপকূলে নতুন বাংলাদেশের হাতছানি।

মনে হচ্ছে, কেনো জানি এ মনে হওয়াটা আমার আশঙ্কা। আমার ভয়। এ শহরটি আবার শেষ হয়ে যাবে, নতুনভাবে গড়া এ শহরের সৌন্দর্য্য ধ্বংস হতে বেশিদিন প্রয়োজন হবে না। রোহিঙ্গাদের হাতে তা হবে। এখানে বহুদিন আমরা স্থানীয় বনদস্যুদের কথা শুনেছি। তাদের তান্ডব দেখেছি। খবরের পাতায় আঁতকে উঠেছি। কিছুদিন পর আমরা ভয়ানকভাবে দেখবো রোহিঙ্গা-দস্যুদের কথা। একটি সামাজিক বিপর্যয়ে মুখোমুখি আমরা হবো। রোহিঙ্গারা হাতিয়া এলাকায় গেলে সেখানে আগে থেকে বসবাস করা অনেকের জায়গা-জমি বেদখল হয়ে যাবে। এনিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামাও বাড়বে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলাও দেখা দেবে। স্থানীয়দের সাথে এদের সংঘাত তৈরি হবে। অর্থনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তিতে ওরা যেকোনো জঘণ্যতম অপরাধ করতে পারে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে যেসব অপরাধ কক্সবাজার অঞ্চলে ঘটছে তার মধ্যে আছে মাদক চোরাচালান, মানবপাচার ইত্যাদি। রোহিঙ্গারা জায়গা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এসব অবৈধ বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। ইয়াবা সয়লাবে এখানে আরেক বদির উত্থান আমরা দেখবো, খুব সহসায় দেখবো।

---
হাবীব ইমন
কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক
ঢাকা ।
Emonn.habib@gmail.com

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.