সুরঞ্জিত নাগ, ফেনীঃ
টানা বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে প্লাবিত ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি সাত দিন পর কিছুটা উন্নতি হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্ধকৃত ত্রাণ সামগ্রী এলাকায় বিতরণ চলছে।
বন্যায় দুই হাজার ৯৬ হেক্টর জমির বীজতলা, আউশ ও আমন ফসল এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রায় এক হাজার পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। দাগনভূঞায় ৩০টি ও ফেনী সদর উপজেলায় ১০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দাগনভূঞায় ৯টি ও ফেনী সদর উপজেলায় একটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এক হাজার পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় দুইশত কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও ৮০ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের অভিমত- গতকাল শনিবার রাত থেকে আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বন্যার পানি সম্পুর্ন সরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
দাগনভূঞা উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে গত কয়েক দিন থেকে উপজেলার ১১০টি গ্রামের মধ্যে ৭৩টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে রয়েছে। তবে ৩০টি গ্রাম সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব এলাকার আমনের বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে, বহু মৎস খামারের মাছ ভেসে গেছে। হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে ৯৩টি পানিবন্দি পরিবারকে তুলে আনা হয়েছে। উপজেলার ৩০টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সেগুলি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ছোটবড় সব খাল ও নদীতে বাঁশ, জাল, কচুরিফেনা বা বাঁধসহ সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, দাগনভূঞায় বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে তিন কিস্তিতে মোট ৫০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফেনী সদর উপজেলায় ২০ টন চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা ও ফুলগাজী উপজেলায় ১৫ টন চাল ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কোন মানুষ যেন ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়। প্রয়োজনে আরো ত্রাণ সহায়তা বরাদ্ধ দেয়া হবে।
তিনি আজ রোববার সকালে দাগনভূঞা উপজেলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এক সভায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর, পাকা সড়ক, কাঁচা সড়কসহ সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ফেনীর অতিরিক্ত উপ পরিচালক আলী আহমদ জানান, জেলায় এবারের বন্যায় এক হাজার দুইশত ৫৮ হেক্টর জমির বীজতলা, ২৫০ হেক্টর আউশ ধান ও ৪৩৯ হেক্টর রোপা আমন এবং ১৫৯ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব সম্পন্ন হবে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক বলেন, ফুলগাজীতে মুহরী নদী ও কহুয়া নদীর পানি বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।