২২ মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ॥ চার-লেন সড়কের পাশে বাই-লেন নির্মাণ করা হবে
লোকসংবাদ প্রতিনিধি:সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধ ও বড় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সারা দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিকশা/অটোটেম্পু ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহাসড়কগুলোতে এসব ধীর গতির যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রী শুক্রবার সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জনান। সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতে যে সকল সড়ক-মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে সে সকল মহাসড়কের পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য বাই-লেন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের আড়াই লাখ কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা ও গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সড়ক-মহাসড়কের পরিমাণ ২১ হাজার কিলোমিটার। এরমধ্যে জাতীয় মহাসড়ক প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় জাতীয় মহাসড়কে সরকার সিএনচি অটোরিকশা চালনা নিষিদ্ধের এ ঘোষণা করে। এতে গত কয়েক দিনে মহাসড়কে ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমেছে বলে জানান মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় মহাসড়কগুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এসকল সড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরী চলাচল করে। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ও ধীর গতির গাড়িসমূহ বড় যানবাহনের গতি মন্থর করে দেয়। উপরন্তু অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। মূল্যবান প্রাণহানী ঘটছে। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর মধ্যে যেসকল মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে সেসকল মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ সময়ের দাবী। সিএনজি অটোরিকশার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দেখা যায় বেশিরভাগ অটোরিকশা সিএনজিচালিত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, সিএনজি স্টেশনগুলো মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সে জন্য সিএনজি চালকদের গ্যাস সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী আরো বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে সারা দেশের মহাসড়কে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘সড়কে নিরাপত্তা বিধানে আগামী ১ আগস্ট থেকে সারা দেশের জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা এবং সকল শ্রেণির অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ এখন থেকে তা সুনির্দিষ্ট করে শুধু ২২টি জাতীয় মহাসড়কে বন্ধ থাকবে অটোরিকশা। এই মহাসড়কগুলো হচ্ছে-
জাতীয় মহাসড়ক এন-১ কাচপুর সেতু (ঢাকা)- মদনপুর-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-রামু (কক্সবাজার), এন-২ কাচপুর সেতু (ঢাকা)-ভেলানগর (নরসিংদী)-ভৈরব-সরাইল-মাধবপুর-মিরপুর-শেরপুর-সিলেট বাইপাস, এন-৩ জয়দেবপুর চৌরাস্তা-ময়মনসিংহ বাইপাস পয়েন্ট, এন-৪ জয়দেবপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল-জামালপুর, এন-৫ আমিনবাজার সেতু (ঢাকা)-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া ঘাট-খয়েরচর ঘাট-কাশিনাথপুর-হাটিকমরুল-বগুড়া বাইপাস-রংপুর বাইপাস- সৈয়দপুর বাইপাস- দশমাইল (দিনাজপুর)- ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-বাংরাবান্দা, এন-৬ কাশিনাথপুর (পাবনা)-পাবনা বাইপাস-দশুড়িয়া-নাটোর বাইপাস-রাজশাহী বাইপাস-নবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ- বালিয়াদীঘি স্থলবন্দর, এন-৭ দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (রাজবাড়ী মোড়)- মাগুরা-ঝিনাইদহ বাইপাস-যশোর বাইপাস-খুলনা সিটি বাইপাস-মংলা, এন-৮ তেঘরিয়া মোড় (ঢাকা)-মাওয়া-কেওড়াকান্দি-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী, এন-১০২ ময়নামতি (কুমিল্লা)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইপাস-সরাইল, এন-১০৫ মদনপুর-ভুলতা-মিরেরবাজার-ভোগড়া-কড্ডা (ঢাকা বাইপাস), এন-৪০৫ এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকমরুল, এন-৫০২ বগুড়া-নাটোর, এন-৫০৬ রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম, এন-৫০৭ হাটিকমরুল-বনপাড়া, এন-৫০৯ বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারি, এন-৫৪০ নবীনগর-ইপিজেড-চন্দ্রা, এন-৭০২ যশোর-মাগুরা, এন-৭০৪ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-দাশুড়িয়া, এন-৭০৬ চাঁচড়া মোড় (যশোর)-বেনাপোল, এন-৮০৪ ভাঙ্গা-ফরিদপুর বাইপাস-রাজবাড়ী মোড়, এন-৮০৫ ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-মোল্লারহাট-ফরিকহাট-নোয়াপাড়া, এন-৮০৬ ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান, সড়ক বিভাগ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুনায়েদ আহমেদ, নোয়াখালী সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: শাহনেওয়াজ, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান উপস্থিত ছিলেন।