লোকসংবাদ ডেস্কঃ
ভারতে শিশুরা যাতে অবাধে পর্নোগ্রাফিক সাইটে যেতে না-পারে, সেই যুক্তিতে সরকার ৮৫০টিরও বেশি সাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের জেরে গত দু`তিনদিন ধরেই ভারতে বিভিন্ন পর্নো সাইট দেখতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। আর এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিল্পী-লেখক-বুদ্ধিজীবী সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
গত মাসেই সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে বলেছিল, সরকার বিভিন্ন পর্নো সাইট – বিশেষ করে যেগুলোতে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি বা শিশু যৌনতা থাকে – সেগুলো যে ঠেকাতে পারছে না তাতে তারা অসন্তুষ্ট।
সেই রায়ের জেরেই এখন সরকারের টেলিকম মন্ত্রণালয় দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি-দের নির্দেশ দিয়েছে, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি তো বটেই – আরও বহু জনপ্রিয় পর্নো সাইটও ভারতে ব্লক করতে হবে।
তারা যে তালিকাটা পাঠিয়েছে তার তালিকাও বিরাট লম্বা। অন্তত ৮৫৭টা সাইটের নাম আছে তাতে।
গত শুক্রবারই এই সরকারি চিঠি আইএসপি-গুলোর হাতে পৌঁছেছে, কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক এই নির্দেশ মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়নি।
সরকারের মন্ত্রী-আমলারা কেউ প্রকাশ্যে এই নির্দেশ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি। তবে টেলিকম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে সোমবার শুধু এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে এই ৮৫৭ সাইটে অবাধ অ্যাক্সেস যাতে কন্ট্রোল করা হয়, সেই মর্মে আইএসপিগুলোকে ‘অ্যাডভাইস’ বা উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ভারতে অনেকেই সরকারি এই নির্দেশনামাকে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন।
বেস্টসেলার লেখক চেতন ভগত টুইট করে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, ``পর্নো নিষিদ্ধ করবেন না। পারলে ধর্ষণ নিষিদ্ধ করুন, জবরদস্তি নিষিদ্ধ করুন। যৌনতা নিষিদ্ধ করাটা কোনও সমাধান নয়।``
বলিউডের চিত্রনির্মাতা রামগোপাল ভার্মাও সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন, ``ইচ্ছুক প্রাপ্তবয়স্কদের একটা নির্দোষ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা আর তালেবান বা আইএস যেভাবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে সে দুটো একই জিনিস।``
রাজনীতিকরা সচরাচর এই ধরনের বিতর্ক থেকে দূরে থাকলেও মুম্বইতে কংগ্রেসের নেতা মিলিন্দ দেওরা কিন্তু মুখ খুলেছেন। তিনি টুইট করেছেন, ``পর্নো ভালবাসি কি না সেটা এখানে প্রশ্ন নয়। সরকার এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিনতাই করছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর কি তাহলে ফোন আর টিভি নিষিদ্ধ করার পালা?``
অ্যাডাল্ট সাইট পর্নহাব যে বিশ্বব্যাপী স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেটে পর্নো ট্র্যাফিকের উৎস বা সোর্স হিসেবে ভারতের নাম আছে চার নম্বরে, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার ঠিক পরেই।
বলে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও দেখা গেছে।
পর্নো সাইটগুলো দেখার ক্ষেত্রে এই সরকারি বিধিনিষেধ আরোপের ফলে ভারতে এই লক্ষ লক্ষ মানুষ যে বেজায় মুশকিলে পড়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। বিসিসি।