নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে থেকে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় পাঁচ শিশুকে সোমবার রাতে বিজিবি ও বিএসএফ এর উপস্থিতিতে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে বিকেলে ওই শিশুদেরকে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ এর কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন নোয়াখালীর দুই নং আমলী আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফারহানা ভূঁইয়া।
আদালতের আদেশের পর নোয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. আবদুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম শিশুদেরকে ভারতের বিলোনিয়া সীমান্তে বিএসএফ এর ক্যাম্পে নিয়ে যান।
সেখান থেকে নোয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. আবদুর রহমান জানান, শিশুদেরকে তাদের অভিবাবকদের কাছে হস্তান্তরের সময় বিএসএফ এর কোম্পানী কমান্ডার নিপাল কুমার দাস, বিজিবির মেজর কাজী ওবায়দুর রেজা, বিলোনীয়া থানার ওসি রতন কুমার পাল, উদয়পুর থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান সাজিদ জানান, গত ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বসুরহাট ক্যাডেট মাদ্রাসার সামনে সন্দেহজনকভাবে পাঁচ শিশুকে নিয়ে ঘোরাফেরা করছিলেন রেহানা বেগম। মুছাপুর ইউনিয়নের বাহার উল্লার স্ত্রী হেনার পৈত্রিক বাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এ সময় স্থানীয় লোকজন সন্দেহ হলে তাদের আটক করে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে শিশুদেরকে উদ্ধার ও রেহানা বেগমকে আটক করে।
উদ্ধারকৃত শিশুদের মধ্যে শামীম চৌধুরী পুলিশের কাছে তার পরিচয় ও বাবার মুঠোফোন নম্বর দেয়। এরপর শামীমের বাবা আবুল বাশার ও ত্রিপুরা রাজ্যের রাধাকৃষ্ণপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে সেখানকার পুলিশ শুক্রবার পাঁচশিশুর অপহরণের বিষয়টি কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে নিশ্চিত করে। তারা হচ্ছে-রাধাকৃষ্ণপুর থানা এলাকার আবুল বাশারের ছেলে শামীম চৌধুরী(১২), ওবায়দ উল্লার ছেলে শাহীন চৌধুরী(৯), মেয়ে নাছরিন বেগম(৪), মো. আলী হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন নাহিদ(১০ মাস) ও এনায়েত উল্যাহ চৌধুরীর ছেলে তক্কিন চৌধুরী(৬)।
গত চার দিন ধরে বাবা মায়ের আদর স্ত্রেহের পরিবর্তে থানা, আদালত আর পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই পাঁচ শিশু। পুলিশ জানিয়েছে, আত্মীয়তার সুবাধে ত্রিপুরা রাজ্যের রাধাকৃষ্ণপুর থানার ওবায়দ উল্লা, এনায়েত উল্লা ও আলী হোসেনের পরিবারের এই শিশুদেরকে তাজিয়া মিছিল দেখানো ও নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে নিয়ে আসে রেহানা বেগম।
আটকের পর রাতে থানায় রেখে পরদিন দুপুরের পাঁচ শিশুকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শিশুদেরকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিনের জিম্মায় রেখে দুই পাচারকারীকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। নোয়াখালীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সুরক্ষিত নিবাস না থাকায় ওইদিন রাতেও শিশুদেরকে রাখা হয় থানায়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন জানান, পরদিন আদালতের নির্দেশে নিয়ম অনুযায়ী ছয় বছরের নিচে দুই শিশু সিয়াম হোসেন ও নাছরিনকে চট্টগ্রামের রৌপাবাদে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমনি নিবাসে এবং বাকী তিনজনকে হাটহাজারীতে সরকারি শিশু পরিবারে পাঠানো হয়।