লোকসংবাদ প্রতিবেদন:
নোয়াখালী কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ,
মৌমাছি কচি কাঁচারমেলা-বিজয় মেলা-বইমেলা-বৈশাখী উৎসব চত্বর দখল করে
নোয়াখালী পৌরসভা ও ‘আলিফ ডেভেলপার প্রপাটিজ লিমিটেড’ কর্তৃক নির্মাণাধীন
‘ড্রিম পার্ক’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে ঢাকা বসবাসকারী
নোয়াখালীর সংস্কৃতিকর্মী, লেখক ও সাংবাদিকরা।
শনিবার এক বিবৃতিতে তারা মনে করেন, প্রাচীর ঘেরা এই পার্কটি
নির্মাণের মাধ্যমে শহরের প্রতিবেশ কাঠামো ঝুঁকি মধ্যে পড়বে; যা জনস্বাস্থ্য
ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে হুমকির মধ্যে ফেলবে। পাশাপাশি কোনরূপ নিয়মনীতির
তোয়াক্কা না করে জামায়াতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানির বাণিজ্যিক পার্ক
তৈরি নামে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ, মুক্তমঞ্চ,
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব বন্ধ সংকুচিত করাকে
বিবৃতিদাতারা স্বাধীনতা বিরোধীতাদের দীর্ঘ চক্রান্তের অংশ বলে ধারণা করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নোয়াখালী শহরের ঐতিহ্যবাহী বড় দীঘির দক্ষিণ
পাড় গত কয়েক দশক থেকে স্থানীয় শিল্প-সাহিত্য-মুক্তবুদ্ধি চর্চার চারণভূমি
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন, জঙ্গিবাদ বিরোধীসহ আন্দোলনের
প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই চত্বরটি। এ স্থানটি নোয়াখালী শহরের একমাত্র
মুক্ত এলাকা এবং দীঘির এ পাড়ে গত প্রায় পঁচিশ বছর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি শহরের নাগরিকদের জন্য এই
পার্কটি একমাত্র বৈকালিক ভ্রমণের মুক্ত জায়গাটি। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার
শুরু থেকে স্বাধীনতা বিরোধী বারবার এই মেলা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়েও
পারেনি। কিন্তু, বর্তমানে পার্ক নির্মাণের নামে জামায়াতে ইসলামের
দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তের অংশ হিসেবে এ জায়গাটি তারা হাতিয়ে নিতে চায়।
ইতোমধ্যে জেলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আদালতে
মামলা করা হয়েছে এবং মামলাটি চলমান থাকলেও পৌরসভা আইনের পরোয়া না করে পার্ক
নির্মাণের কাজ করছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন, কবি মোস্তফা ইকবাল, টিভি নাট্যকার ও
গল্পকার মিরণ মহিউদ্দীন, কবি ও লেখক রিয়াসাত আল ওয়াসিফ রঞ্জন, কবি ও
গল্পকার প্রত্যয় জসীম, গণজাগরণমঞ্চ কর্মী ও আবৃত্তিকার ডমিনিক ক্যাডেট,
টিভি নাট্যকার পরিচালক ও চলচ্চিত্রকার সাজ্জাদ রাহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক,
কলাম লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী হাবীব ইমন, ঢাকাস্থ নোয়াখালী জার্নালিস্ট
ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক মশিউর রহমান রুবেল, সাংগঠনিক সম্পাদক
মুস্তফা মনোয়ার সুজন, সাংবাদিক জাহিদুর রহমান, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ তারেক
চৌধুরী, কন্ঠশিল্পী ঐশী, সঙ্গীত শিল্পী শাওন কায়সার, সাপ্তাহিক নোয়াখালী
কথার সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন, কবি শহীদুল ইসলাম মুকুল, টিভি ও
চলচ্চিত্র নির্মাতা মো. নোমান, নাট্যকর্মী মো. জোবায়ের রুবেল, সংস্কৃতি
কর্মী ও সংগঠক শিহাব মাহমুদ, কন্ঠশিল্পী তনু রানী কর, চিত্রশিল্পী মশিউর
রহমান পলাশ, সংস্কৃতি কর্মী তাহমিনা তাবাসসুম রূপা, কন্ঠশিল্পী রাবিতা
সাবাহ, টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা মোরশেদুর রহমান, সংস্কৃতি কর্মী নাহিদ রহমান
ও সুবল দেবনাথ।
বিবৃতিদাতারা উক্তস্থানে পার্কের সংস্কার, শিশুপার্ক তৈরি করা
পক্ষে। কিন্তু, সেটি হতে হবে অবশ্যই উন্মুক্ত, সরকারি এবং অবাণিজ্যিক। অথচ
এই বেসরকারি পার্ক গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধাদের
স্মৃতিসৌধ, বিজয় মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব বন্ধ
করার যে পায়তারা করছে তার প্রতিবাদ জানান। তাই অনতিবিলম্বে উক্ত বেসরকারি
পার্ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করে, জনগণের জন্য উন্মুক্ত এবং অবাণিজ্যিক,
সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশগম্য পার্ক তৈরির আহ্বান জানান।