বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলটির বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বলেছেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি।
নোয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমকে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করলেন।
মির্জা আজম আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরকে এক কলমের খোঁচায় মুক্ত করে দিয়েছিলেন। গোলাম আজম ছিলেন পাকিস্তানী নাগরিক, তাকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী বানিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, রাজাকার মওলানা আবদুল মান্নাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলা হয়। জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে রাজাকার, আলবদরদেরকে পুনর্বাসন করা, যুদ্ধাপরাধীদেরকে মুক্ত করে দেয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরকে পুরস্কৃত করা, সেনাবাহিনীতে খেতাবপ্রপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা। জিয়া যতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন ততদিন প্রতিরাতে ঢাকা শহরে কারফিউ দিয়ে গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।’
তিনি বলেন বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর এই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা ছিলো নির্বাসনে; যারা রাজাকার-আলবদর-আল শামস্ তারা ছিলো বুক ফুঁলিয়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জয়বাংলা স্লোগানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ জাতীয়ভাবে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।’
বুধবার বিকেলে নোয়াখালী কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে ১৫ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধন করেন সদর-সুবর্ণচর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। এ সময় বিজয় মঞ্চে শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশেন করা হয়।
এরপর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াছ শরীফ পিপিএম-সেবা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, মিয়া মোঃ শাহজাহান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সহ সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল করিম বাচ্চু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ নাছির উদ্দিন, মাঈম মুদ্দিন ও সাহাব উদ্দিন আহমদ পোখরাজ।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল করিম বাচ্চু জানান, বিজয় মেলার প্রতিদিনের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বিজয় মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা, মুক্তিযুদ্ধের গণসংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, যাত্রা, নাটক, পুঁথিপাঠ সহ বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যেকে তুলে ধরা। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে দুই শতাধিক স্টলে দেশীয় পণ্যের প্রদর্শণ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এসব আয়োজন।
- আবু নাছের মঞ্জু