নোয়াখালীর রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলামপুর ও আলাদীনগর গ্রামে জামাত-শিবিরের তান্ডবের শিকার হিন্দু পরিবারগুলো ৭৬টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের আহাজারিতে পুরা এলাকায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। শুক্রবার পর্যন্ত অনেকে না খেয়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাঈদীর মামলার রায় ঘোষনার পর ওই এলাকার ১০টি বাড়িতে ৩৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় জামাত-শিবির কর্মিরা। এ সময় ৫৩টি ঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। বাতাসে এখনো পোড়া গন্ধ আসছে। আতংক কাটেনি এখনও। কারণ জামাত-শিবির কর্মিরা আগুন দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছে যেগুলোতে সময়ের অভাবে আগুন দিতে পারেনি সেগুলোতে সময় করে পুনরায় আগুন দিবে।
‘কিভাবে আবার পোড়া ঘর উঠাবে। কি করবে, কি খাবে কোথায় বসবে, ক্লান্ত হয়ে আসছে পুরো শরীর। এ ক্লান্ত শরীরকে কোথায় একটু বিশ্রাম দিবে। কার কাছে বেদনার কথাগুলো বলবে, কে সহযোগিতা করবে। ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত শুধু দু’চোখ দিয়ে জল বইছে। ‘বাবুরে যুদ্ধের সময় রাজাকাররাও এমন করে আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি, শুধু একবার এসেছে, বাড়িতে রাউন্ড দিয়ে চলে গেছে’।
শুক্রবার রাজগঞ্জের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে গেলে সবচেয়ে বেশি পোড়া মালি বাড়ির বিশখা (৫০) এসব বলে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সাঈদীর রায় ঘোষণার পর হঠাৎ করে এক থেকে দেড়শত লোক এর মধ্যে বেশিরভাগ ১৫-১৭ বছর বয়সী। আর তাদের অগ্রভাবে ছিল মুখবাঁধা কিছু যুবক ও মধ্যবয়সী। আল্লা হুয়াকবার, নারায়ে তাকবির উচ্চারণ করে ধর-মার, পুড় শব্দ করতে করতে রাজগঞ্জের গঙ্গাপ্রসাদ ভূঞা বাড়ি, আচার্য্য ঠাকুর বাড়ি, মালী বাড়ী, পুলিন দত্ত বাড়ি, কুরী বাড়ি, বণিক বাড়ী, শান্তি বণিক বাড়ী, শীল বাড়ী, মতিলাল বাবুর বাড়িসহ প্রায় ১০টি হিন্দু বাড়ির ভিতরে ঢুকে ভাংচুর, লুট ও প্রায় ৩৬ ঘরে আগুন ধরিয়ে সম্পূর্ণ পুঁড়ে ফেলে। এ সময় বাড়ি ঘর থেকে গৃহস্থরা পাশ্ববর্তী মুসলিম বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এছাড়া হিন্দুদের উপাসনালয়ের মধ্যে ঠাকুর বাড়ির মন্দীর, রাজগঞ্জ বাজার মন্দির, পুলিন দত্ত বাড়ীর মন্দীর, কালীর হাট মন্দিরসহ ৫টি মন্দির ও মুর্তি ভাংচুর করে আগুন দেয়।
এমন সময় ঘটনাস্থলে নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মোহতাছিম বিল্লাহ্ সবুজ ও এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহিম বাবুলকে জামাত শিবির কর্মিরা বেদম মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং তাদের দুটি ক্যামেরা ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ এলে পুলিশ ও জামাত-শিবিরকর্মিদের দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে সন্ধ্যার দিকে ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আসে এবং র্যাবের একটি দলও আসে।
কুরি বাড়ির খগেন্দ্র চন্দ্র দে (৮০) বলেন, আমি ’৭১’র যুদ্ধ দেখেছি। তবে কালকের (বৃহস্পতিবার) ঘটনার মতো এমন ঘটনা সে সময়ও এ এলাকায় ঘটেনি। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজাকারদের তান্ডবকেও হার মানায়।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৪ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে ভালো রয়েছে। জেলাতে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন আছে।
অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ৩৬ পরিবারের মাঝে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার করে ১৮ লাখ টাকা এবং ৬টি মন্দিরের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হবে বলে জানান প্রশাসক ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ। এছাড়া গান্ধী আশ্রম ট্রস্ট ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বলে জানান ট্রাস্টের পরিচালক রাহা নব কুমার।
#
- আবু নাছের মঞ্জু