আবু নাছের মঞ্জু
যক্ষা নিয়ে নানা রকম প্রচারাভিযানের পরও তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে এই রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণাগত অষ্পষ্টতা রয়ে গেছে। যার কারণে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নানা রকম কর্মকান্ডের পরও এই রোগ থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে না হতদরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে কার্যকর সচেতনতা বার্তা পৌঁছানো গেলে যক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে নানা শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে আলাপকালে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এক নাগাড়ে তিন সপ্তাহের অধিক সময়ব্যাপী কাশি যক্ষারোগের প্রধান লক্ষণ। যক্ষায় আক্রান্ত রোগী বিনাচিকিৎসায় থাকলে তার কফ কিংবা হাঁচি-কাশির মধ্য দিয়ে যক্ষারোগের জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। এ সব সাধারণ তথ্য না জানার কারণে দুর্গম চর, বস্তি ও ঘরবসতিপূর্ণ যক্ষায় আক্রোন্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।
যক্ষা নিয়ে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে ২০১২ সালে যক্ষায় আক্রন্ত হয়ে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়। একই বছর সন্দেহভাজন ২৫ হাজার ৬৮৩ জনের কফ পরীক্ষার করে ৩ হাজার ২৩ জন যক্ষারোগী সনাক্ত করা হয়। এরমধ্যে চিকিৎসায় ২ হাজার ৫২৩ জন রোগী আরোগ্য লাভ করেন। অন্যদিকে চিকিৎসায় অনিয়মের কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট(এমমডিআর) বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন। চিকিৎসায় গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জেলার হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও কবিরহাট উপজেলায় নানা শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, যক্ষা সম্পর্কিত অসচেতনতা এবং এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য না জানার কারণে এ রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা সমূহ কাজে লাগাতে পারছে না তৃণমূল জনগোষ্ঠী। যার কারণে এক সময়ের দুরারোগ্য ব্যাধী যক্ষা এখনো জেলার অসংখ্য মানুষের ধারনায় সুকঠিন রূপ ধারণ করে আছে। বিনামূল্যে কফ পরীকার মাধ্যমে যক্ষরোগী সনাক্ত করা এবং এর চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি জানা নেয় হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরের অনেকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় ২৪০টি কেন্দ্রে যক্ষারোগ সনাক্তকরণের জন্য বিনামূল্যে কফ সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহীত কফ পরীক্ষার জন্য রয়েছে ২১টি ল্যাবরেটরি। এসব কার্যক্রম পরিচালনায় ৩১৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী এবং ব্র্যাকের ১৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ১ হাজার ৫৩০ জন স্বাস্থ্য সেবিকা নিয়োজিত রয়েছেন। যেখানে বর্তমানে ১ হাজার ৭১৯ জন যক্ষা রোগীর চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
যক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃস্টির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক, গণনাটক ও লোকসংগীত পরিবেশন, পোষ্টার, লিফলেট, ষ্টিকার ও বিলবোর্ড স্থাপন সহ নানা রকম কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতসব আয়োজনের পরও সামাজিক অসচেতনাতার কারণে জেলার দুর্গম চর ও বস্তি এলাকায় যক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে।
হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ নিরক্ষর। যক্ষা নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচলিত বার্তা দ্বীপবাসীকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভালো ফল দিচ্ছে না। এজন্য স্থানীয় ভাষায় যক্ষা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। হাতিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাতি হেলাল উদ্দিন জানান, সমুদ্রগামী মৎস্যজীবী, মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে পাড়ায় যক্ষা সম্পর্কে যথেষ্ট অসচেতনতা রয়েছে। নি¤œ আয়ের এসব মানুষ ব্যয় বহুল বেসরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। অন্যদিকে না জানার কারণে সরকারি বেসরকারিভাবে বিনামূল্যে যক্ষার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
যক্ষার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা নেই সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্কের কৃষক আমির হোসেনের (৬০)। যার কারণে নিজ বাড়ি ও এলাকার অনেকেই মাসের পর মাস কাশিতে ভুগলেও কফ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি কখনো। কাশি নিয়ে মৃত্যু হলেও কাশির মূল কারনটা জানা হয়নি অনেকের।
সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের জালিয়াল গ্রামের নূর মোহাম্মদ জানান, যক্ষা রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কফ পরীক্ষা করতে হয় বলে জানা আছে তাঁর। তবে, এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো জানা নেই।
যক্ষার চিকিৎসা চলাকালে রোগী যদি কার্যকর বিধি অনুযায়ী ওষুদ গ্রহণ না করে অথবা ওষুধ গ্রহণের মেয়াদ শেষ হবার আগেই ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়, তবে প্রয়োগকৃত ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এর ফলে যক্ষা চিকিৎসার প্রচলিত ওষুধ আর কাজ করতে চায় না। এটিকে ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষা বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা বলা হয়ে থাকে।
অশ্বদিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবদুস সাত্তার জানান, যক্ষা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরকে তারা তথ্য দিয়ে থাকেন। বিনামূল্যে যক্ষার চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও জানা আছে অনেকের। তবে, গাফিলতির কারণে কারো কারো একাধিবার যক্ষা হয়েছে বলে জানা আছে তাঁর।
নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় অবহেলার কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। পূর্ব অশ্বদিয়া গ্রামের মুজাফর আহম্মদ (৫০) ২০১২ সালে যক্ষায় আক্রান্ত হলে ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে তার ৬ মাসের চিকিৎসা চলে। ওষুধ সেবনের পর মুজাফরের কফ পরীক্ষা করা হলে তার শরীরে দ্বিতীয় বার যক্ষার জীবানু ধরা পড়ে। অসাবধানতার কারণে পিতার কাছ থেকে যক্ষায় আক্রান্ত হন মুজাফরের মেয়ে শিরিন আক্তার(২২)। শিরিনের শরীরেও দ্বিতীয় বার এই রোগের জীবানু ধরা পড়ে।
কবিরহাট উপজেলার মো. হানিফের ছেলে বেলাল হোসেনের (৩৩) ২০১২ সালের জুলাই মাসের ৯ তারিখে যক্ষা রোগের চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসা চলাকালে ২ মাস, ৫ মাস ও ৬ মাস পর তিনবার তার কফ পরীক্ষা করা হলে প্রতিবারই যক্ষার জীবানু ধরা পড়ে। এরপর ঢাকা ও চট্রগ্রামে তার কফের কালচার করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্রগ্রামে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে ২৪ মাসের চিকিৎসা চলবে বলে জানিয়েছে বেলালের পরিবার।
চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে যক্ষারোগীর মৃত্যুর ঘটনাও দিন দিন বেড়ে চলছে। সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আবুল বাশার(৫৫) ২০১২ সালের ৩০ জুন যক্ষার চিকিৎসা শুরু করেন। রোগ ভারি করে চিকিৎসকের কাছে আসায় ৩ মাসের মাথায় তার মৃত্যু হয়।
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর ইউসুফের মতে, যক্ষা নিমূলে সামাজিক সচেতনতায় সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। যক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও জনঅংশগ্রহণে সহজ ও কার্যকর প্রচারাভিযান দরকার। উদ্বুদ্ধকরণ ও সামাজিক সচেতনতা একজন যক্ষারোগীর নিরাময়ে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। যক্ষা মানেই যে নিশ্চিত মৃত্যু নয়, নিয়মীতি ওষুধ সেবনের মধ্যদিয়ে একজন যক্ষারোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে; এসব তথ্য পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. আবদুর রশিদ মোল্লা জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় সন্দেহভাজন যক্ষা রোগীর কফ পরীক্ষা ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যপারে জনসচেতনতা সৃস্টির লক্ষ্যে সরকারে পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে যক্ষা সংক্রামণের হার ও যক্ষাজনিত মৃত্যুহার অর্ধেকে কমিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ। সরকারের এই অঙ্গিকার বাস্তবায়নে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সচেতনা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। আর এ জন্যে যক্ষা বিষয়ক প্রচলিত তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রচার কার্যক্রমকে আরো বেশি জনবান্ধন করে তোলার বিষয়টি ভাবনায় আনা দরকার বলে বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যক্ষা নিয়ে নানা রকম প্রচারাভিযানের পরও তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে এই রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণাগত অষ্পষ্টতা রয়ে গেছে। যার কারণে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নানা রকম কর্মকান্ডের পরও এই রোগ থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে না হতদরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে কার্যকর সচেতনতা বার্তা পৌঁছানো গেলে যক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে নানা শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে আলাপকালে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এক নাগাড়ে তিন সপ্তাহের অধিক সময়ব্যাপী কাশি যক্ষারোগের প্রধান লক্ষণ। যক্ষায় আক্রান্ত রোগী বিনাচিকিৎসায় থাকলে তার কফ কিংবা হাঁচি-কাশির মধ্য দিয়ে যক্ষারোগের জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। এ সব সাধারণ তথ্য না জানার কারণে দুর্গম চর, বস্তি ও ঘরবসতিপূর্ণ যক্ষায় আক্রোন্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।
যক্ষা নিয়ে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে ২০১২ সালে যক্ষায় আক্রন্ত হয়ে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়। একই বছর সন্দেহভাজন ২৫ হাজার ৬৮৩ জনের কফ পরীক্ষার করে ৩ হাজার ২৩ জন যক্ষারোগী সনাক্ত করা হয়। এরমধ্যে চিকিৎসায় ২ হাজার ৫২৩ জন রোগী আরোগ্য লাভ করেন। অন্যদিকে চিকিৎসায় অনিয়মের কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট(এমমডিআর) বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন। চিকিৎসায় গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জেলার হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও কবিরহাট উপজেলায় নানা শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, যক্ষা সম্পর্কিত অসচেতনতা এবং এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য না জানার কারণে এ রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা সমূহ কাজে লাগাতে পারছে না তৃণমূল জনগোষ্ঠী। যার কারণে এক সময়ের দুরারোগ্য ব্যাধী যক্ষা এখনো জেলার অসংখ্য মানুষের ধারনায় সুকঠিন রূপ ধারণ করে আছে। বিনামূল্যে কফ পরীকার মাধ্যমে যক্ষরোগী সনাক্ত করা এবং এর চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি জানা নেয় হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরের অনেকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় ২৪০টি কেন্দ্রে যক্ষারোগ সনাক্তকরণের জন্য বিনামূল্যে কফ সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহীত কফ পরীক্ষার জন্য রয়েছে ২১টি ল্যাবরেটরি। এসব কার্যক্রম পরিচালনায় ৩১৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী এবং ব্র্যাকের ১৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ১ হাজার ৫৩০ জন স্বাস্থ্য সেবিকা নিয়োজিত রয়েছেন। যেখানে বর্তমানে ১ হাজার ৭১৯ জন যক্ষা রোগীর চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
যক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃস্টির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক, গণনাটক ও লোকসংগীত পরিবেশন, পোষ্টার, লিফলেট, ষ্টিকার ও বিলবোর্ড স্থাপন সহ নানা রকম কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতসব আয়োজনের পরও সামাজিক অসচেতনাতার কারণে জেলার দুর্গম চর ও বস্তি এলাকায় যক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে।
হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ নিরক্ষর। যক্ষা নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচলিত বার্তা দ্বীপবাসীকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভালো ফল দিচ্ছে না। এজন্য স্থানীয় ভাষায় যক্ষা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। হাতিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাতি হেলাল উদ্দিন জানান, সমুদ্রগামী মৎস্যজীবী, মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে পাড়ায় যক্ষা সম্পর্কে যথেষ্ট অসচেতনতা রয়েছে। নি¤œ আয়ের এসব মানুষ ব্যয় বহুল বেসরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। অন্যদিকে না জানার কারণে সরকারি বেসরকারিভাবে বিনামূল্যে যক্ষার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
যক্ষার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা নেই সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্কের কৃষক আমির হোসেনের (৬০)। যার কারণে নিজ বাড়ি ও এলাকার অনেকেই মাসের পর মাস কাশিতে ভুগলেও কফ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি কখনো। কাশি নিয়ে মৃত্যু হলেও কাশির মূল কারনটা জানা হয়নি অনেকের।
সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের জালিয়াল গ্রামের নূর মোহাম্মদ জানান, যক্ষা রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কফ পরীক্ষা করতে হয় বলে জানা আছে তাঁর। তবে, এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো জানা নেই।
যক্ষার চিকিৎসা চলাকালে রোগী যদি কার্যকর বিধি অনুযায়ী ওষুদ গ্রহণ না করে অথবা ওষুধ গ্রহণের মেয়াদ শেষ হবার আগেই ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়, তবে প্রয়োগকৃত ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এর ফলে যক্ষা চিকিৎসার প্রচলিত ওষুধ আর কাজ করতে চায় না। এটিকে ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষা বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা বলা হয়ে থাকে।
অশ্বদিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবদুস সাত্তার জানান, যক্ষা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরকে তারা তথ্য দিয়ে থাকেন। বিনামূল্যে যক্ষার চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও জানা আছে অনেকের। তবে, গাফিলতির কারণে কারো কারো একাধিবার যক্ষা হয়েছে বলে জানা আছে তাঁর।
নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় অবহেলার কারণে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। পূর্ব অশ্বদিয়া গ্রামের মুজাফর আহম্মদ (৫০) ২০১২ সালে যক্ষায় আক্রান্ত হলে ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে তার ৬ মাসের চিকিৎসা চলে। ওষুধ সেবনের পর মুজাফরের কফ পরীক্ষা করা হলে তার শরীরে দ্বিতীয় বার যক্ষার জীবানু ধরা পড়ে। অসাবধানতার কারণে পিতার কাছ থেকে যক্ষায় আক্রান্ত হন মুজাফরের মেয়ে শিরিন আক্তার(২২)। শিরিনের শরীরেও দ্বিতীয় বার এই রোগের জীবানু ধরা পড়ে।
কবিরহাট উপজেলার মো. হানিফের ছেলে বেলাল হোসেনের (৩৩) ২০১২ সালের জুলাই মাসের ৯ তারিখে যক্ষা রোগের চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসা চলাকালে ২ মাস, ৫ মাস ও ৬ মাস পর তিনবার তার কফ পরীক্ষা করা হলে প্রতিবারই যক্ষার জীবানু ধরা পড়ে। এরপর ঢাকা ও চট্রগ্রামে তার কফের কালচার করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্রগ্রামে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে ২৪ মাসের চিকিৎসা চলবে বলে জানিয়েছে বেলালের পরিবার।
চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে যক্ষারোগীর মৃত্যুর ঘটনাও দিন দিন বেড়ে চলছে। সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আবুল বাশার(৫৫) ২০১২ সালের ৩০ জুন যক্ষার চিকিৎসা শুরু করেন। রোগ ভারি করে চিকিৎসকের কাছে আসায় ৩ মাসের মাথায় তার মৃত্যু হয়।
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর ইউসুফের মতে, যক্ষা নিমূলে সামাজিক সচেতনতায় সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। যক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও জনঅংশগ্রহণে সহজ ও কার্যকর প্রচারাভিযান দরকার। উদ্বুদ্ধকরণ ও সামাজিক সচেতনতা একজন যক্ষারোগীর নিরাময়ে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। যক্ষা মানেই যে নিশ্চিত মৃত্যু নয়, নিয়মীতি ওষুধ সেবনের মধ্যদিয়ে একজন যক্ষারোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে; এসব তথ্য পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. আবদুর রশিদ মোল্লা জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় সন্দেহভাজন যক্ষা রোগীর কফ পরীক্ষা ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যপারে জনসচেতনতা সৃস্টির লক্ষ্যে সরকারে পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে যক্ষা সংক্রামণের হার ও যক্ষাজনিত মৃত্যুহার অর্ধেকে কমিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ। সরকারের এই অঙ্গিকার বাস্তবায়নে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সচেতনা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। আর এ জন্যে যক্ষা বিষয়ক প্রচলিত তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রচার কার্যক্রমকে আরো বেশি জনবান্ধন করে তোলার বিষয়টি ভাবনায় আনা দরকার বলে বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
- আবু নাছের মঞ্জু