প্রথম শ্রেণীর নোয়াখালী পৌরসভার পাঁচ’শ কিলোমিটার সড়ক এখনও কাঁচা
পাকা সড়কগুলোর ৪৫ ভাগ চলাচলের অযোগ্য ॥ জনদুর্ভোগের চরমে পৌরবাসী
প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে খোদ শহরের প্রধান সড়কের সংযুক্ত সড়কগুলোর সবগুলোই হাটু পানিতে ডুবে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায় নোয়াখালী পৌর শহর তথা এক রাস্তার জেলা শহরটি প্রত্যেকটি সংযুক্ত সড়ক খানাখন্দে ভরে রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে মাইজদী হাউজিং সড়কগুলো পুন মেরামত করা হলেও সরকারি আবাসিক এলাকার (ফ্ল্যাট) সড়ক, জেলা জজকোর্ট-প্রেসক্লাব সড়ক, জেলা প্রশাসন-পুলিশ সুপার-সিভিল সার্জন অফিস সড়ক, শিল্পকলা এ্যাকাডেমি-সরকারি প্যারামেডিকেল স্কুল-পাঁচ রাস্তার মোড় সড়ক, মাইজদী বাজার- মাইজদী স্টেশন সড়ক, মাইজদী বাজার-জেলখানা-পুলিশ লাইন-সুজাপুর সড়ক, মাস্টার পাড়ার আভ্যন্তরিক-নোয়াখালী সরকারি কলেজের সংযুক্ত প্রায় সবগুলো সড়ক, সার্কিট হাউজের সামনের দত্তেরহাট গরু বাজার পর্যন্ত সড়ক, ফকিরপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে মুরগীর ফার্ম সংলগ্ন সড়কগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো সড়কই যান চলাচল অযোগ্য হয়ে রয়েছে কয়েক বছর। এতে শুকনো মৌসুমে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পৌরবাসীকে। আর বর্ষা মৌসুমেতো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা শহরের আভ্যন্তরিন সড়কগুলোতে রিকশা চালায় নিজাম উদ্দিন। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় চালান। বর্তমানে হরতাল অবরোধ বিধায় অন্য দিনের চেয়ে ১০০-১৫০ টাকা বেশি পান। তিনি বলেন- প্রধান সড়ক ছাড়া পৌরসভার প্রত্যেকটি সড়কই গাড়ি (রিকশা) চালানোর অযোগ্য। তবে গত বছরের শেষের দিকে হাউজিংয়ের সড়কগুলো নতুন করার কারণে ওই দিকে চালাতে কষ্ট হয় কম। এ ছাড়া অন্য সড়কগুলো এত বেশি খারাপ যে, এক বেলা (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা) চালানোর পর আর ইচ্ছে গাড়ি চলাতে ইচ্ছে করে না। একদিকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান, অপর দিকে গাড়ির টায়ার, রিং, স্প্রুকসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কিছুনা কিছু প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে তাকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে।
মাইজদী বাজারের বাসিন্দা কামাল হোসেন মাসুদ বলেন- মাইজদী বাজার থেকে পশ্চিম দিকে পুলিশ লাইন হয়ে সুজাপুর, মাইজদী বাজার-মাইজদী স্টেশন সড়ক ও মাস্টারপাড়ার ভিতর দিয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজ যাওয়ার বেশ কয়েকটি সড়ক পুরোটাই খানাখন্দে ভরে রয়েছে। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা। এ সব সড়ক দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে বেশি। ফলে দেখা যায় সুস্থ্য মানুষও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া প্রতিদিন ছোট-খাট দু-তিনটি দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় যানবাহন চালকরা সাধারণ মানুষ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
এমন অভিযোগ অসংখ্য পৌরবাসীর। পৌর শহরের আভ্যন্তরের বিভিন্ন ইজিবাইক ও রিকশা চালকরা ক্ষোভের সাথে বলেন- প্রতিটি রিকশা নতুন লাইসেন্স করতে ২০০ টাকা ফি দেয়া হচ্ছে। আবার প্রতি বছর ১০০ টাকা করে নবায়ন ফি দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইজিবাইকগুলো লাইসেন্স না করলেও অবৈধভাবে পুলিশ, বিট ইত্যাদি নামে প্রতিদিনই অনেক টাকা নিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অথচ সড়কগুলোতে গাড়ি চালানো দু:সাধ্য। প্রতিদিন দেখা যায় যা ভাড়া চালান তার চেয়ে অনেক বেশি গাড়ি মেরামতে চলে যায়।
নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া পৌর শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন- দীর্ঘদিন পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার স্বল্পতার কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সড়কগুলোর এমন দশা হয়েছে। বর্তমানে আধুনিক ও যুগপোযোগী ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। পুরোপুরিভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পন্ন হলে সড়কে আর পানি জমবে না।
তিনি আরও বলেন- ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়ক, জজকোর্ট-প্রেসক্লাব ও প্যারামেডিকেল স্কুলের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুন:পাকা করণের জন্য বিএমডিএফ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়া মাত্র আগামী মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য সড়কগুলোরও পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু করা হবে।
- আবু নাছের মঞ্জু