লোকসংবাদ প্রতিনিধি:
বিজয় শোভাযাত্রা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদযাপিত হয়েছে। সোমবার ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বিকেল তিনটায় পিটিআইস্থ মুক্ত স্কোয়ার থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়ে জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের পতাকা উত্তোলন শেষে বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আলোচনা সভা করা হয়।
নোয়াখালী মুক্তদিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফজলে এলাহী, নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদিন, মুক্ত দিবস উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব মিয়া মো. শাহ্জাহান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মমতাজুল করিম বাচ্চু, সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান, নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিলুফার মমিন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা আহ্বায়ক এড. কাজী মানছুরুল হক খসরু ও জেলা বারের সাবেক সেক্রেটারী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন প্রমুখ।
বক্তারা দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী হানাদার মুক্ত হওয়ার ইতিহাসন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেন। পরে সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের উপর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্থানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা পুলিশ ও ইপিআর ফেরৎ জওয়ানদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্থানীরা। নোয়াখালী পিটিআই এবং বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাটি গাড়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। তাদের সাথে এদেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে এসে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। শহীদ হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে তারা হত্যা করেছিলো শতাধিক ব্যক্তিকে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত প্রান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানিদের পিছু হটিয়ে দেয়। ০৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। আর সাত ডিসেম্বর মুক্ত হয় গোটা নোয়াখালী।