আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী:
টর্নেডোর আঘাত, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও ভারি বর্ষণে শুক্রবার দিনভর নোয়াখালীর জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। উপক’লীয় হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, গাছপালা উপড়ে পড়া ও ফসলী জমি তলিয়ে যাওয়াসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিরতির খবর পাওয়া গেছে। কাঁচাঘর বাড়ি ধ্বসে পড়ে কোম্পানীগঞ্জ নারী ও শিশুসহ ২০জন আহত হয়েছে। জোয়ারের তোড়ে হাতিয়ার বিভিন্ন চরের ২০ হাজার গরু মহিষ ও বনের হরিন ভেসে গেছে। মধ্য রাতের জোয়ারে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে নদী সংগ্লন চর এলাকায় প্রানহানির আশংকা করা হচ্ছে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান জানান, উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের থানার হাট, চর বৈশাখী ও চর ধানের শীষ গ্রামে ভোর ৫টার দিকে টর্ণেডোর আঘাতে ২০ টিও বেশি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত ও ২ শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়ে। এছাড়া ভারি বর্ষণের উপজেলার ১৪ হাজার একর জমির আমন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বাড়তে পারে বলে মনে হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, লঘুচাপের কারনে সাগর উত্তাল থাকায় প্রচন্ড ঢেউ ও স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, দমার চর, বয়ারচর, নলের চর, ক্যারিংচর, গাইস্যার চর, জাঙ্গালিয়া, চরঈশ্বর, নলচিরা ও তমরদ্দি সহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫ কিরৈামিটার ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা বেড়িবাধ দিয়ে জোয়ারের পানি ডুকে অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলী জমির আমন ফসল নষ্ট হয়েছে ও মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। হাতিয়ার সাথে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জোয়ারে নিঝুমদ্বীপ, দমার চর, গাইস্যার চর ও জাঙ্গালিয়ার চরের ২০ হাজার গরু মহিষ ও বনের হরিন ভেসে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কার্যত পুরো হাতিয়াবাসী এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। রাত ২টার দিকে আবার জোয়ারের সময় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশংকা করেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রশাসন রাতে মাইকিং করে জনগনকে সতর্ক করে।
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন জানান, ৬ ফুট উচ্চতায় জোয়ারে বিশ্ব বেঁড়িবাঁধের ভাঙ্গন দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ৩টি রিং বাঁধ ভেঙ্গে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কাঁচা-ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ে ও জোয়ারের তোড়ের মধ্যে পড়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়েছে। দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ডুবে যাওয়ায় মুছাপুর ইউনিয়নের বাগদারা বাজারে স্থানান্তর করা হয়। দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ ও গুচ্ছাগ্রাম বাজারের ২শতাধিক দোকান ঘর ৩ফুট পানির নিচে রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রাম, দক্ষিণ মুছাপুর জেলেপাড়া, চরএলাহী ইউনিয়নের চরলেংটা গ্রাম, গাংচিল ও চরপার্বতী কদমতলা প্লাবিত এলাকা থেকে লোকজনকে উদ্ধার করে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যায়।
উপজেলা ত্রাণ ও পূণবাসন অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানাযায়, প্লাবিত এলাকার ৫টি গ্রামে আড়াই হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামে রিং বাঁধ, চরলেংটা বিং বাঁধ, কদমতলা রিং বাঁধ জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে পানি ডুকে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৭শ ২৫টি কাঁচা ঘর হেলে পড়ে গেছে। প্রায় ১০হাজার হেক্টর আমন ধান ৩ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ২শাতধিক গবাদিপশু মারা গেছে। ৮০টি মৎস্য প্রকল্প, ৫শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। মানুষের বাড়ী ঘরে পানি ডুকে যাওয়ায় তাদেরকে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সাংসদ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওবায়দুল কাদের ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বিকেলে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহের চৌধুরী, কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পন্দ্র বড়–য়া, ওসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫টন চাল নগদ ২৫হাজার টাকা ও শুকনা খাদ্য শুক্রবার বিকেলে বিতরণ করা হয়েছে।
টানা বর্ষণে জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়ক সহ সবগুলো সড়ক ও আবাসিক এলাকা হাটু পানিতে তলিয়ে আছে। চৌমুহনী-মাইজদী সড়কে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের প্রধান সড়কের পাশের দোনপাটে পানি ডুকে পড়েছে। বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে সরকারি আবাসিক এলাকা, হাউজিং এস্টেট, খন্দকার পাড়া, মাস্টার পাড়া, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, কৃষ্ণরামপুর-সহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ২ থেকে ৩ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
মতামত
আমাদের শহর ও দানবে হানা এবং একটি উন্নত হাসপাতালের আবেদন
হা বী ব ই ম ন
আমাদের প্রিয় শহর মাইজদী। জন্ম শহর মাইজদী। যে শহরটিকে জীবনের এতোটা বছর চিনে আসছিলাম, বড় আপন মনে করতাম, সেই শহরটিকে আজ বড্ড ধূসর মনে হয়। বড় অচেনা মনে হয়। বড় বেমানান একটা জেলা শহর মাইজদী। কোলাহলপূর্ণ একটি শহরটা আজ বিষময় হয়ে উঠেছে।
মতামত
করোনাভাইরাস: লক্ষণ, চিকিৎসা ও সুরক্ষার উপায় কী
লোকসংবাদ ডেস্কঃকরোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, সেই রোগটিকে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- চীন থেকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে।
ছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে।
প্রধান পাতা
চলতি সংবাদ
আহত ২০।। ২০ হাজার গরু মহিষ ও অসংখ্য হরিন ভেসে গেছে, জেলা শহরে হাটু পানি।। টর্নেডোর আঘাত, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও ভারি বর্ষণে নোয়াখালীর জনজীবনে দুর্ভোগ
আহত ২০।। ২০ হাজার গরু মহিষ ও অসংখ্য হরিন ভেসে গেছে, জেলা শহরে হাটু পানি।। টর্নেডোর আঘাত, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও ভারি বর্ষণে নোয়াখালীর জনজীবনে দুর্ভোগ
সাম্প্রতিক
বৃহত্তর নোয়াখালীর তথ্যনির্ভর অনলাইন পত্রিকা লোকসংবাদ পড়ুন। লোকসংবাদে বিজ্ঞাপন দিন।
রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধূলা, ভ্রমণকাহিনী, গল্প, কবিতা, তথ্যপ্রযুক্তি, সমস্যা, সম্ভাবনা, দৃষ্টি নন্দন ছবি, ভিডিওচিত্র কিংবা বৃহত্তর নোয়াখালীর যে কোন বিষয়ে আপনার মতামত, প্রবন্ধ, নিবন্ধ লোকসংবাদ পাঠকদের জন্য পাঠিয়ে দিন news@loksangbad.com ঠিকানায়।