বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ সরে গেলেও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় জনদুর্ভোগ এখনো কমেনি। জলচ্ছাস ও অতিবৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদী ছাড়াও হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখনো জলমগ্ন হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতির মুখে পড়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর। দুর্গত এলাকায় এখনো সরকারি বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত এাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় জনচলাচলে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জোয়ারের পানিতে হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে হাতিয়ায় প্রায় ১০ হাজার, কোম্পানীগঞ্জে এক হাজার ৮শ, সুবর্ণচরে শতাধিক, কবিরহাটে ১৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ফসল। ভেসে গেছে সহশ্রাধিক মৎস্য খামারের মাছ।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রবল জোয়ারে কোম্পানীগঞ্জে ২ কিলোমিটার এবং হাতিয়ায় ৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং হাতিয়ায় ১৫ কিলোমিটার ঁেবড়িবাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব ভাঙ্গন দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের সঙ্গে লোনা পানি ঢুকে পড়ার আশংকা থাকায় ফসলের জমিগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, ৮-৯ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানিতে নিঝুমদ্বীপ, চরঈশ্বর, বয়ারচর, নলের চর, ক্যারিংচর, নলচিরা ও তমরদ্দিসহ সবকয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে মৌলভীরচর, ডালচর, দমারচর, চরজাঙ্গালীয়া ও নিঝুমদ্বীপের ২০ হাজারের বেশী গরু-মহিষ ও বেড়া। এছাড়া প্লাবিত এলাকার আমন ফসল ও মৎস্য খামার-পুকুরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দের বাইরে স্থানীয়ভাবে ত্রান সাহায্য নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চরবালুয়া, চর লেংটা, মুছাপুর, চরএলাহী, চরফকিরা, চরকচ্ছপিয়া, দিয়ারাবালুয়া গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩ শ কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং দেড় সহশ্রাধিক কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান জানান, উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের থানারহাট, চরবৈশাখী ও চরধানের শীষ গ্রামে ঝড়ের আঘাতে ২০ টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত ও ২ শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়ে। এছাড়া ভারি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে ১৪ হাজার একর জমির আমন ফসল।
কবিরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলার ধানশালিক, ধানসিঁড়ি ও ঘোষবাগ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচশ মাছের প্রজেক্টের মাছ ভেসে গেছে এবং ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল ডুবে গেছে। এছাড়া ঝড়ে এসব এলাকার ১৫টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে দুই দিনেও বৃষ্টির পানি নামেনি। তাই জলমগ্ন হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক, অফিস- আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট এবং আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ি থেকে পানি না নামায় দুর্ভোগ লেগেই আছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, জলোচ্ছাসে ও অতিবৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমির আমন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক সহায়তা হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা এবং ২১ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি স্বীকার করে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্যের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
- আবু নাছের মঞ্জু