ঢাকা। ২০১১-০২-০৭ইং।
বন্ধু সুমনের বাবা আজ (সোমবার) অফিসে আসলেন। আমার পাণে একপকল তাকালেন, অতপর: নিরব প্রস্থান।
তাঁর এরূপ আচরণের হেতু আমার জানা। মাস তিনেক আগেরকার কথা। সুমন বেকার যুবক। বহু প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ বাবা একপ্রকার নির্বিকার ছিলেন। হঠাৎ সুমনের মাঝে পরিবর্তন। সে ব্যবসা করবে। কিন্তু কী ব্যবসা? কেউ একজন বুদ্ধি দিল দেশে এমন এক ব্যবসা আছে যেখানে মাত্র দশ মাসে টাকা দ্বিগুন করা যায়। সুমন ব্যবসা করবে এরূপ কথা শুনে বাবা প্রায় চমকিত। ছেলের মতের পরিবর্তন তার কাছে যেন অপ্রত্যাশিত। বাবা জানতে চাইলেন-কী ব্যবসা?
উত্তরে তিনি যা শুনলেন তাতে তিনি শুধু ক্রোধান্বিতই হননি উল্টো শাঁসিয়ে দিলেন এই বলে যে, এরূপ “সুদখোর কর্মকে” কারবার বলা যায়না। সে যাত্রায় সুমনের কর্মে লিপ্ত হবার অভিপ্রায়টা বিনষ্ট হলো। এরূপ মহুর্তে আরেক বন্ধুর পরামর্শে সুমনে মাথায় নতুন একটা ব্যবসা জেঁকে বসল। খুব রমরমা ব্যবসা। গত কয়েক মাসে টাকায় টাকা আনে এরূপ নানান কাব্য প্রচলিত হয়েছে। এর নাম “শেয়ার ব্যবসা”। সুমন এবার নি:সংকোচে বাবার নিকট শেয়ার ব্যবসার প্রস্তাব নিয়ে গেল। সাথে বুদ্ধিদাতা বন্ধু। কিন্তু এবারও তিনি বিগড়ে গেলেন এবং বললেন, এটা ব্যবসা নয় স্রেফ “জুয়া খেলা”। কারণ তিনিও ব্যবসা ভেবে এই খেলা একাবার খেলেছেন এবং ঠকেছেন। বেচারা সুমনের এবারও গতি হয়নি। সে এসে আমাকে একবার তার বাবার নিকট অনুরোধ করার জন্য অনুনয়-বিনয় করতে লাগল। আমি অগত্যা তার বাবার নিকট গেলাম এবং বললাম, “খেলা যেহেতু বলছেন এবং যেহেতু হার-জিত আছে এবং আপনি যখন একবার ঠকেছেন এবার নিশ্চয়ই জেতার পালা”। উত্তরে তিনি বললেন, গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মার্কেট অনেক বেশি বেড়েছে, অতিমূল্যায়িত। প্রতি-উত্তরে আমি সাহসিকতার সাথে বললাম “কে বলেছে এমন কথা? দেখেননি-অর্থমন্ত্রী কি বলেছেন? তিনি বলছেন, মার্কেট এখনো অতিমূল্যায়িত হয়নি, স্বাভাবিক আছে”। আমার এরূপ বাণী শুনে আঙ্কেল পুরোনো পত্রিকা খুঁজে অর্থমন্ত্রীর এরূপ “অকাট্য” বক্তব্য স্বচক্ষে দেখলেন এবং পড়লেন। তখন তাঁর মূখবয়ে যে প্রতিছব্বি ফুটে উঠল তাতে মনে হয়েছে তিনি হয়তো খানিটা আত্মতৃপ্তিতে মোহান্বিত হয়ে পড়েছেন এবং ভাবছেন “যে খেলায় তিনি হেরেছেন সেই খেলায়’ই এবার জিতবেন”।
অতপর...... খেলা শুরুর পালা। প্রথম দিন যে শেয়ার কিলনেল পরের দিনই দেখলেন দাম প্রচুর বেড়েছে। দু’দিন পর আমাদের দাওয়াত দিলেন। ঘরে গিয়ে দেখি ঐতিহ্যবাহী ১৪’’ সনি টিভি’র স্থলে ৩০” দেয়াল টিভি শোভা পাচ্ছে। আঙ্কেলের নিকট টিভি পরিবর্তনের হেতু জানতে গিয়ে বললাম, “ব্যবসার টাকা হাতে না পেয়ে নতুন টিভি’র আমদানির কারণ কি?” তিনি অট্টহাসিতে অট্টালিকা কম্পিত করলেন এবং বললেন “ই’টিভি দেখার জন্য কিনেছি, জ্ঞানী-গুণীজনের কথাবার্তা না শুনলে কি খেলা জমে?”
উত্তরে আমিও অট্টহাসিতে বাতাস ভারি করে দিলাম এবং বলালম “আঙ্কেল এবার ভালই খেলায় জমিয়েছেন, জয় আপনার অবধারিত”। আঙ্কেল মুচকি হেসে সুমনকে আদরের ছলে মাথা হাত বুলিয়ে কি যেন মনে মনে পড়লে এবং ফু দিয়ে দিলেন।
........আজ সেই আঙ্কেলের এরূপ মুখায়বব আমার কাছে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা বিষাদময় হয়ে উঠেছে। খেলায় হেরে যাওয়া হতাশাগ্রস্ত সুমনের বাবা গত তিন দিন বাড়ি ফিরেননি। আন্টির কান্নাকাটি, সুমনের নিরুদ্দেশ তাকে মানবিক করেছে বলে আবার ফিরে আসলেন।
আমার মন’টা এসব-সাথে অন্যসব কারণ নিয়ে ব্যথিত। কিন্তু, আজ দুপুরে (সোমবার) হঠাৎ করে যেন অতিমাত্রায় আনন্দিত হয়ে উঠলাম। একটি ওয়েব সাইটে দেখলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে সকল জালিম জুয়াড়িদের চিহ্নিত করেছেন যাদের দ্বারা নিরাপরাধ সুমনে বাবা সহ আরো অনেক নি:স্ব হয়েছেন। তিনি মন্ত্রী সভার বৈঠকে বললেন “শেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারির সাথে বিএনপি জড়িত”। একবার ইচ্ছে করল, আঙ্কেকে সু-বার্তাটি জানাই। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী একটি তদন্ত কমিঠি গঠন করেছেন এবং তাদের কাজ ছিল যারা সুমনের বাবাকে (প্রতীকী) নি:স্ব করেছে তাদের খুজে বের করা। লম্বা লম্বা বাণীও শুধালেন কমিঠির প্রধান। এখন পর্যন্ত অফিস খুজে পাননি এরূপ কমিঠি তদন্ত কাজের সময় সীমা বেঁধে দিলেন ২ মাস। কিন্তু তার আগেই যে ফলাফল আমাদের হাতে এসেছে তা নিশ্চয়ই বিস্ময়কর নয় বরং বলতে হয় ডিজিটাল যুগের উদাহরন। আশাকরছি, আগামীকাল অথবা কিছুপরে সময় এবং সুযোগ মতো তদন্ত কমিঠির প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ঐসকল লোকদের কথা জেনে নিবেন যাদের কু-কর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন-চিহ্নিত করেছেন।
ইতিপূর্বেরকার কথা বলছি, অর্থমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করলেন এবং বললেন মাস তিন-চারেক আগে বাজার সর্ম্পকে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন তা ভুল ছিল। তাহলে কি ধরা যায়, অর্থমন্ত্রীও বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন। তার অবিবেচক মন্তব্য বিএনপির জুয়াড়িদের অপকর্মের অন্যতম হাতিয়ার ছিল, নয় কি?
তাহলে ব্যপারটি কি দাঁড়ায়? পরিস্কার না অপরিস্কার?
ডিএসসি’র প্রেসিডেন্ট মাস ছয়েক আগে যখন গভর্নর পুঁজিবাজারের কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তখন নানান অপমানজনক কথা বলেছেন। তিনিই আবার সিএসই’র প্রেসিডেন্টকে সাথে নিয়ে পুঁজি বাজার অতিমূল্যায়িত হয়েছে এরূপ বক্তব্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তো কি হল?.......যা হলো তা দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু এই ব্যক্তিটিই সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুষলেন মার্চেন্ট ব্যাংক সাথে ই’টিভি’কে। আবার বললেন, “ভেড়ার দলের মতো মানুষ যে হারে বাজারে এসেছে তাতে মানুষই বাজার অতিমূল্যায়িত করে দিয়েছে, এটা মানুষের দোষ”।
বাহ্, অর্থমন্ত্রীর অবিবেচক কথা যা তিনি এই মহূর্তে স্বীকারপূর্বক দূ:খ প্রকাশ করেছেন এবং তা যে মানুষের দলকে ভেড়ার দলে পরিণত করেছে সে বিষয়ে শাকিল রিজ্ভী কিছু বলেননি। প্রয়োজন বোধও নেই। কারণ সত্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী কথা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমিও একমত। বলি, সেই মহুর্তে অর্থমন্ত্রীর অবিবেচক কথা, শাকিল রিজ্ভীদের নিরবতা, শেষ মহুর্তে অন্যের ওপর দোষ চাপানো সবই ছিল এক সূত্রে গাঁথা!! এবং সব কিছুই হয়তো বিএনপির জন্যই তারা করেছেন।
আরেকটু আগের কথা বলি, প্রশ্ন উঠেছে বুক বিল্ডিং এবং ডাইরেক্ট লিস্টিং দুর্নীতি নিয়ে। তো সেই দুর্নীতির সর্ব্বোৎকৃষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন। তাদের কয়েকটি কোম্পানী এভাবে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে, যা ওপেন সিক্রেট এবং সর্বময় জানা। তো নিশ্চয়ই এরাও বিএনপির লোকজন।
শাকিল রিজভীর কথা বলি, তিনি বললেন, ই’টিভি-র কারণে মানুষের মাঝে শেয়ার বাজার সম্পর্কে ব্যপক প্রচারণা হয়েছে যার ফলাফল অতিমাত্র নেগেটিভ এবং বর্তমান। কিন্তু ভদ্রলোক কয়েক মাস আগে কি বলেছেন, আর কেনইবা ই’ভিটিকে ডিএসসি’র বিল্ডিং’এ অফিসও বানিয়ে দিলেন?
রবিবার অর্থমন্ত্রী হুঙ্কার দিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়তে না পারলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে”। বাহ্, আনন্দিত হব না অন্যকিছু, বুঝতে পারছি না। সরকারি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে “নির্দিষ্ট সময়” আসলে কি সময়, কোন সময়, সেটা মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেননি। এটা কি মন্ত্রী মহোদয়ের ইচ্ছাকৃত আরেকটি ভুল না অনিচ্ছাকৃত অন্যকিছু? আমার জানামতে, এরূপ সময় পার হয়েছে বহু আগে। এ বিষয়ে বুলি কথার কাব্য শোনানো হয়েছে অনেকবার। আসলে বারবার এমন নাটকের বাহার-হুঙ্কার, অন্যের কাঁধে দোষ চাপানোর প্রবণতা, তদন্তের আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সব যেন সুমনের বাবার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। সত্যি এটা কি কোন ব্যবসা-বিনিয়োগ??? না “নগ্ন-বিবৎস লোকদের সাথে যারা সুবিধামত মহূর্তে কথার ধরণ বদলায়, নব নব নাট্যকর্মের জম্ম দেয় তাদের সাথে জুয়া খেলা-সর্প খেলা”!!?? -প্রশ্ন’টা আমার মনেও জ্বলছে।
বন্ধু সুমনের বাবা আজ (সোমবার) অফিসে আসলেন। আমার পাণে একপকল তাকালেন, অতপর: নিরব প্রস্থান।
তাঁর এরূপ আচরণের হেতু আমার জানা। মাস তিনেক আগেরকার কথা। সুমন বেকার যুবক। বহু প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ বাবা একপ্রকার নির্বিকার ছিলেন। হঠাৎ সুমনের মাঝে পরিবর্তন। সে ব্যবসা করবে। কিন্তু কী ব্যবসা? কেউ একজন বুদ্ধি দিল দেশে এমন এক ব্যবসা আছে যেখানে মাত্র দশ মাসে টাকা দ্বিগুন করা যায়। সুমন ব্যবসা করবে এরূপ কথা শুনে বাবা প্রায় চমকিত। ছেলের মতের পরিবর্তন তার কাছে যেন অপ্রত্যাশিত। বাবা জানতে চাইলেন-কী ব্যবসা?
উত্তরে তিনি যা শুনলেন তাতে তিনি শুধু ক্রোধান্বিতই হননি উল্টো শাঁসিয়ে দিলেন এই বলে যে, এরূপ “সুদখোর কর্মকে” কারবার বলা যায়না। সে যাত্রায় সুমনের কর্মে লিপ্ত হবার অভিপ্রায়টা বিনষ্ট হলো। এরূপ মহুর্তে আরেক বন্ধুর পরামর্শে সুমনে মাথায় নতুন একটা ব্যবসা জেঁকে বসল। খুব রমরমা ব্যবসা। গত কয়েক মাসে টাকায় টাকা আনে এরূপ নানান কাব্য প্রচলিত হয়েছে। এর নাম “শেয়ার ব্যবসা”। সুমন এবার নি:সংকোচে বাবার নিকট শেয়ার ব্যবসার প্রস্তাব নিয়ে গেল। সাথে বুদ্ধিদাতা বন্ধু। কিন্তু এবারও তিনি বিগড়ে গেলেন এবং বললেন, এটা ব্যবসা নয় স্রেফ “জুয়া খেলা”। কারণ তিনিও ব্যবসা ভেবে এই খেলা একাবার খেলেছেন এবং ঠকেছেন। বেচারা সুমনের এবারও গতি হয়নি। সে এসে আমাকে একবার তার বাবার নিকট অনুরোধ করার জন্য অনুনয়-বিনয় করতে লাগল। আমি অগত্যা তার বাবার নিকট গেলাম এবং বললাম, “খেলা যেহেতু বলছেন এবং যেহেতু হার-জিত আছে এবং আপনি যখন একবার ঠকেছেন এবার নিশ্চয়ই জেতার পালা”। উত্তরে তিনি বললেন, গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মার্কেট অনেক বেশি বেড়েছে, অতিমূল্যায়িত। প্রতি-উত্তরে আমি সাহসিকতার সাথে বললাম “কে বলেছে এমন কথা? দেখেননি-অর্থমন্ত্রী কি বলেছেন? তিনি বলছেন, মার্কেট এখনো অতিমূল্যায়িত হয়নি, স্বাভাবিক আছে”। আমার এরূপ বাণী শুনে আঙ্কেল পুরোনো পত্রিকা খুঁজে অর্থমন্ত্রীর এরূপ “অকাট্য” বক্তব্য স্বচক্ষে দেখলেন এবং পড়লেন। তখন তাঁর মূখবয়ে যে প্রতিছব্বি ফুটে উঠল তাতে মনে হয়েছে তিনি হয়তো খানিটা আত্মতৃপ্তিতে মোহান্বিত হয়ে পড়েছেন এবং ভাবছেন “যে খেলায় তিনি হেরেছেন সেই খেলায়’ই এবার জিতবেন”।
অতপর...... খেলা শুরুর পালা। প্রথম দিন যে শেয়ার কিলনেল পরের দিনই দেখলেন দাম প্রচুর বেড়েছে। দু’দিন পর আমাদের দাওয়াত দিলেন। ঘরে গিয়ে দেখি ঐতিহ্যবাহী ১৪’’ সনি টিভি’র স্থলে ৩০” দেয়াল টিভি শোভা পাচ্ছে। আঙ্কেলের নিকট টিভি পরিবর্তনের হেতু জানতে গিয়ে বললাম, “ব্যবসার টাকা হাতে না পেয়ে নতুন টিভি’র আমদানির কারণ কি?” তিনি অট্টহাসিতে অট্টালিকা কম্পিত করলেন এবং বললেন “ই’টিভি দেখার জন্য কিনেছি, জ্ঞানী-গুণীজনের কথাবার্তা না শুনলে কি খেলা জমে?”
উত্তরে আমিও অট্টহাসিতে বাতাস ভারি করে দিলাম এবং বলালম “আঙ্কেল এবার ভালই খেলায় জমিয়েছেন, জয় আপনার অবধারিত”। আঙ্কেল মুচকি হেসে সুমনকে আদরের ছলে মাথা হাত বুলিয়ে কি যেন মনে মনে পড়লে এবং ফু দিয়ে দিলেন।
........আজ সেই আঙ্কেলের এরূপ মুখায়বব আমার কাছে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা বিষাদময় হয়ে উঠেছে। খেলায় হেরে যাওয়া হতাশাগ্রস্ত সুমনের বাবা গত তিন দিন বাড়ি ফিরেননি। আন্টির কান্নাকাটি, সুমনের নিরুদ্দেশ তাকে মানবিক করেছে বলে আবার ফিরে আসলেন।
আমার মন’টা এসব-সাথে অন্যসব কারণ নিয়ে ব্যথিত। কিন্তু, আজ দুপুরে (সোমবার) হঠাৎ করে যেন অতিমাত্রায় আনন্দিত হয়ে উঠলাম। একটি ওয়েব সাইটে দেখলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে সকল জালিম জুয়াড়িদের চিহ্নিত করেছেন যাদের দ্বারা নিরাপরাধ সুমনে বাবা সহ আরো অনেক নি:স্ব হয়েছেন। তিনি মন্ত্রী সভার বৈঠকে বললেন “শেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারির সাথে বিএনপি জড়িত”। একবার ইচ্ছে করল, আঙ্কেকে সু-বার্তাটি জানাই। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী একটি তদন্ত কমিঠি গঠন করেছেন এবং তাদের কাজ ছিল যারা সুমনের বাবাকে (প্রতীকী) নি:স্ব করেছে তাদের খুজে বের করা। লম্বা লম্বা বাণীও শুধালেন কমিঠির প্রধান। এখন পর্যন্ত অফিস খুজে পাননি এরূপ কমিঠি তদন্ত কাজের সময় সীমা বেঁধে দিলেন ২ মাস। কিন্তু তার আগেই যে ফলাফল আমাদের হাতে এসেছে তা নিশ্চয়ই বিস্ময়কর নয় বরং বলতে হয় ডিজিটাল যুগের উদাহরন। আশাকরছি, আগামীকাল অথবা কিছুপরে সময় এবং সুযোগ মতো তদন্ত কমিঠির প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ঐসকল লোকদের কথা জেনে নিবেন যাদের কু-কর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন-চিহ্নিত করেছেন।
ইতিপূর্বেরকার কথা বলছি, অর্থমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করলেন এবং বললেন মাস তিন-চারেক আগে বাজার সর্ম্পকে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন তা ভুল ছিল। তাহলে কি ধরা যায়, অর্থমন্ত্রীও বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন। তার অবিবেচক মন্তব্য বিএনপির জুয়াড়িদের অপকর্মের অন্যতম হাতিয়ার ছিল, নয় কি?
তাহলে ব্যপারটি কি দাঁড়ায়? পরিস্কার না অপরিস্কার?
ডিএসসি’র প্রেসিডেন্ট মাস ছয়েক আগে যখন গভর্নর পুঁজিবাজারের কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তখন নানান অপমানজনক কথা বলেছেন। তিনিই আবার সিএসই’র প্রেসিডেন্টকে সাথে নিয়ে পুঁজি বাজার অতিমূল্যায়িত হয়েছে এরূপ বক্তব্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তো কি হল?.......যা হলো তা দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু এই ব্যক্তিটিই সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুষলেন মার্চেন্ট ব্যাংক সাথে ই’টিভি’কে। আবার বললেন, “ভেড়ার দলের মতো মানুষ যে হারে বাজারে এসেছে তাতে মানুষই বাজার অতিমূল্যায়িত করে দিয়েছে, এটা মানুষের দোষ”।
বাহ্, অর্থমন্ত্রীর অবিবেচক কথা যা তিনি এই মহূর্তে স্বীকারপূর্বক দূ:খ প্রকাশ করেছেন এবং তা যে মানুষের দলকে ভেড়ার দলে পরিণত করেছে সে বিষয়ে শাকিল রিজ্ভী কিছু বলেননি। প্রয়োজন বোধও নেই। কারণ সত্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী কথা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমিও একমত। বলি, সেই মহুর্তে অর্থমন্ত্রীর অবিবেচক কথা, শাকিল রিজ্ভীদের নিরবতা, শেষ মহুর্তে অন্যের ওপর দোষ চাপানো সবই ছিল এক সূত্রে গাঁথা!! এবং সব কিছুই হয়তো বিএনপির জন্যই তারা করেছেন।
আরেকটু আগের কথা বলি, প্রশ্ন উঠেছে বুক বিল্ডিং এবং ডাইরেক্ট লিস্টিং দুর্নীতি নিয়ে। তো সেই দুর্নীতির সর্ব্বোৎকৃষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন। তাদের কয়েকটি কোম্পানী এভাবে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে, যা ওপেন সিক্রেট এবং সর্বময় জানা। তো নিশ্চয়ই এরাও বিএনপির লোকজন।
শাকিল রিজভীর কথা বলি, তিনি বললেন, ই’টিভি-র কারণে মানুষের মাঝে শেয়ার বাজার সম্পর্কে ব্যপক প্রচারণা হয়েছে যার ফলাফল অতিমাত্র নেগেটিভ এবং বর্তমান। কিন্তু ভদ্রলোক কয়েক মাস আগে কি বলেছেন, আর কেনইবা ই’ভিটিকে ডিএসসি’র বিল্ডিং’এ অফিসও বানিয়ে দিলেন?
রবিবার অর্থমন্ত্রী হুঙ্কার দিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়তে না পারলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে”। বাহ্, আনন্দিত হব না অন্যকিছু, বুঝতে পারছি না। সরকারি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে “নির্দিষ্ট সময়” আসলে কি সময়, কোন সময়, সেটা মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেননি। এটা কি মন্ত্রী মহোদয়ের ইচ্ছাকৃত আরেকটি ভুল না অনিচ্ছাকৃত অন্যকিছু? আমার জানামতে, এরূপ সময় পার হয়েছে বহু আগে। এ বিষয়ে বুলি কথার কাব্য শোনানো হয়েছে অনেকবার। আসলে বারবার এমন নাটকের বাহার-হুঙ্কার, অন্যের কাঁধে দোষ চাপানোর প্রবণতা, তদন্তের আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সব যেন সুমনের বাবার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। সত্যি এটা কি কোন ব্যবসা-বিনিয়োগ??? না “নগ্ন-বিবৎস লোকদের সাথে যারা সুবিধামত মহূর্তে কথার ধরণ বদলায়, নব নব নাট্যকর্মের জম্ম দেয় তাদের সাথে জুয়া খেলা-সর্প খেলা”!!?? -প্রশ্ন’টা আমার মনেও জ্বলছে।
- জয় রিগ্যান