জমিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে নোয়াখালীর কৃষক। এ সময় কৃষকরা তাঁদের ফলন বিপর্যয়ের জন্যে বীজ কোম্পানীকে দায়ী করে ক্ষতি পূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে কৃষকরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেন।
ঝলক ধানের ফলন বিপর্যয়ের শিকার নোয়াখালীর কৃষক কৃষাণ-কৃষাণী ব্যানারে রবিবার এ কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়।
সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকেন। সমবেত কৃষকরা ১১টা থেকে বিশাল মানববন্ধন রচনা করেন। এসময় ‘জমির ধান দাও -নইলে ক্ষতিপূরণ দাও; প্রতারক বীজ কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও-কৃষকের ক্ষতিপুরণ দাও; মুনাফাখোর বীজ কোম্পানীর দোসরদের চিহিৃত কর- বিএডিসি ও কৃষি বিভাগের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত কর; বীজ নিয়ে বেনিয়াদের চক্রন্ত রুখে দাঁড়াও -কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও’ ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্লেকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে কৃষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, উন্নয়ন সংনস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবুল হোসেন চৌধুরী, এনায়েত মেম্বার, আজগর আলী, জাতীয় যুব জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু নাছের মঞ্জু, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সামাজিক শক্তি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ফারক ফয়সাল প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, ‘হাইব্রিড ধান ঝলক চাষ করে নোয়াখালীর কয়েক হাজার কৃষক এখন দিশেহারা। জেলার বিস্তীর্ণ ফসলী জমির ধান পোক্ত হওয়ার আগেই শুকিয়ে গেছে। ‘মূলত বীজ বিপর্যয়ের কারনেই ধান নষ্ট হয়ে গেছে দাবি করে রাজগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকর আবুল হোসেন বলেন, কৃষক এনার্জি প্যাক এগ্রো লিমিটেড নামের একটি বীজ কোম্পানি চীনের উইনার হাইটেক সিড কোম্পানি উৎপাদিত ঝলক (এগ্রো জি ১) নামের এই বীজ বাজারজাত করে’।
সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের কৃষক এনায়েত মেম্বার বললেন, ‘আমরা গরিব কৃষক- ঝলক ধান চাষ করে আমরা এখন ব্যাংক ঋণ এবং মহাজনের সুদের টাকা পরিশোধের উপায় দেখছিনা। জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বীজ কোম্পনী থেকে আমাদেরকে হয়তো ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিন, তা না পারলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলুন’।
এক পর্যায়ে কৃষকরা তাঁদের নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ক্ষুদ্ধ কৃষকরা এসময় বীজ কোম্পানীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন। এসময় আগুনের লেলিহান শিখা মূর্ত হয়ে ওঠে চলতি বোরো মওসুমে ঝলক ধান আবাদ করে সর্বশান্ত ৭ হাজার কৃষকের প্রতিচ্ছবি।
কৃষকদের ফলন বিপর্যয়ের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র কুমার সরকার বলেন, ‘ঝলক ধান আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ৬ হাজার ৭৯২জন কৃষকদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণর আদায়ের বিষয়ে কোম্পানীর সাথে উচ্চ পর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে। তাদের আদায় করার পর কৃষকদের দেওয়া হবে’।
কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলার মোট এক হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে এবার হাইব্রিড ধান ঝলকের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৪৬৫ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি এবং বাদবাকি জমিগুলো ফসলও অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে এরফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন কম হবে বলে তথ্য দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষি সংশি¬ষ্টদের হিসেবে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির পরিমান চার হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
- আবু নাছের মঞ্জু