আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী:
আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের আজকের এই দিনে দেশের উপকূলীয় জেলা সমূহে নেমে আসে এক মহাদুর্যোগ। প্রলয়ংঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে বিরাণ ভূমিতে পরিনত হয় পুরো উপকূলীয় এলাকা। প্রাণহানী ঘটে হাজার হাজার মানুষের। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাপক ফসলী জমি, প্রাণী ও বনজ সম্পদের।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও তৎসংলগ্ন কয়েকটি চর, সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা, চর জব্বার ও চরক্লার্ক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী উরিরচর-সহ পুরো উপকূলীয় এলাকা মানুষ আর গবাদী পশুর মরদেহে একাকার হয়ে যায়। সেইদিনের ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চরবাসী আজো আৎকে ওঠেন। নিহতদের স্বজনরা যারা বেচে আছেন, তারা এই দিনে স্বজনদের জন্য নিরবে চোখের পানি ফেলেন।
চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য হাজী (৬৫) জানান, সত্তরের জলোচ্ছাসে চোখের সামনেই ভেসে গেছে তার ছয় ছেলে। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি তিনি। ’সারারাত কোনমতে গাছ ধরে বেঁচে থাকলেও ভোর হতেই দেখি ৩১ সদস্যের পরিবারের ২৪ জনই ভেসে গেছে বানের পানিতে। একটি লাশও পাইনি কবর দিতে। দায়িত্বের কারণে গ্রামবাসীর লাশ কবর দেয়া আর ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধারে নেমে পড়তে হয়েছে তখন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ সৃষ্টি করেছিলো এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির।‘ বললেন ফজলুল হক।
চলি¬শ বছর পূর্বের সেইসব জনপদে এখন গড়ে উঠেছে লোকালয়। সত্তরের পর জেগে ওঠা নতুন নতুন চরগুলোতে গত কয়েক বছরে ভূমিহীনরা গড়ে তুলেছে জনবসতি। নতুন চরের মধ্যে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, বয়ারচর, জাহাজিয়ার চর, চর রশিদ, দমার চর, ঢালচর, মৌলভীরচর, সাহেবানির চর, চর নুরইসলাম, চর ইসলাম, কেরিংচর, নলের চর, সুবর্ণচর উপজেলার নঙ্গলিয়া, চরবাটা, চর জুবলী, চরক্লাকের দক্ষিণাংশ-সহ কমপক্ষে ২০টি দূর্গম চরের প্রায় ৩ লাখ মানুষ বেড়িবাধ ও বেড়িবাধের বাইরে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব চরে গত এক দশকে অন্তত ৭০ হাজার একর বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েই চলছে। মাত্র কিছুদিন আগেও ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে এসব দ্বীপ ও চরের ৩০ জন মানুষের প্রানহানি ঘটেছিল।
বনবিভাগ জানায়, সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে জানমাল রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৬৭-৬৮ অর্থ বছর থেকে নোয়াখালী উপকূলে ১ লাখ ৪৫ হাজার একর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন শুরু হয়েছিলো। এরপর বিভিন্ন সময় ৩৫ হাজার একর বনভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অবশিষ্ট বনভূমির মধ্যে ৭০ হাজরেরও বেশি বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে জাতীয় উদ্যান নিঝুম দ্বীপসহ সর্বোচ্চ ৪০ হাজার একর বনভূমি।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এই বন কাটা শুরু হয়ে তা চলে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। বন সমৃদ্ধ নোয়াখালী উপক’লে বিভিন্ন বনদস্যু বাহিনী তাদের আস্তনা গাড়ে তোলে। দস্যুরা বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বন উজাড় করে ভূমিহীন, শহরের বিত্তশালী ও স্থানীয় জোরদারদের কাছে তা বিক্রি করতে থাকে। এভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উপকূলীয় বনভূমি।
সুবর্নচরের চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম সেলিমের মতে, পুরাতন চরক্লার্ক ইউনিয়নের বেড়ির বাইরের ৮টি চরে যদি কোন বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে তাহলে মুহুর্তেই মারা যাবে কয়েক হাজার মানুষ এবং সম্পদেরও ক্ষতি হবে ব্যাপক।
দুর্যোগকালীন এসব এলাকার মানুষের আশ্রয় নেবার কোনো স্থান নেই। এসব চরের মধ্যে মাত্র কয়েকটি চরে হাতে গোনা কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তাও ঝুকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নয়। অন্য চরগুলোতে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ আসলে এসব চর বিরাণভূতিতে পরিনত হবে।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আনম সেলিম বলেন, সেদিনের দু:সহ স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না। রমজান মাসে আসরের সময় থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও বাতাস বইতে শুরু করে। রাত ১০টার পর থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করে। অনেক মানুষ, সম্পদ, গবাদী পশু প্রবল জোয়ারে ভেসে যায়। সকালে দেখি লাশ আর লাশ। তখন আমি চাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলাম। সাবেক স্পিকার মরহুম মালেক উকিল, সহিদ উদ্দিন এস্কেন্দার কচিসহ একটি টিম চরাঞ্চলে নিহতদের সৎকার, রিলিফ টিম করে এক মাসেরও বেশি সময় আমরা অসহায় মানুষদের মধ্যে রিলিফ বিতরণ করি।
’উপকূলের বেশিরভাগ এলাকাই এখন অরক্ষিত। বনাঞ্চল কাটা হয়েছে, বেড়ি নেই, গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মানুষের বসতি। সেরকম কিছু হলে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য সত্তর সালের মত হবে না, কারণ তখন এতটা প্রযুক্তি ছিলো না, তথ্য আদান প্রদানে জটিলতা ছিলো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো দূর্বল।’ বললেন খায়রুল আনম সেলিম।
আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের আজকের এই দিনে দেশের উপকূলীয় জেলা সমূহে নেমে আসে এক মহাদুর্যোগ। প্রলয়ংঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে বিরাণ ভূমিতে পরিনত হয় পুরো উপকূলীয় এলাকা। প্রাণহানী ঘটে হাজার হাজার মানুষের। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাপক ফসলী জমি, প্রাণী ও বনজ সম্পদের।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও তৎসংলগ্ন কয়েকটি চর, সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা, চর জব্বার ও চরক্লার্ক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী উরিরচর-সহ পুরো উপকূলীয় এলাকা মানুষ আর গবাদী পশুর মরদেহে একাকার হয়ে যায়। সেইদিনের ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চরবাসী আজো আৎকে ওঠেন। নিহতদের স্বজনরা যারা বেচে আছেন, তারা এই দিনে স্বজনদের জন্য নিরবে চোখের পানি ফেলেন।
চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য হাজী (৬৫) জানান, সত্তরের জলোচ্ছাসে চোখের সামনেই ভেসে গেছে তার ছয় ছেলে। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি তিনি। ’সারারাত কোনমতে গাছ ধরে বেঁচে থাকলেও ভোর হতেই দেখি ৩১ সদস্যের পরিবারের ২৪ জনই ভেসে গেছে বানের পানিতে। একটি লাশও পাইনি কবর দিতে। দায়িত্বের কারণে গ্রামবাসীর লাশ কবর দেয়া আর ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধারে নেমে পড়তে হয়েছে তখন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ সৃষ্টি করেছিলো এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির।‘ বললেন ফজলুল হক।
চলি¬শ বছর পূর্বের সেইসব জনপদে এখন গড়ে উঠেছে লোকালয়। সত্তরের পর জেগে ওঠা নতুন নতুন চরগুলোতে গত কয়েক বছরে ভূমিহীনরা গড়ে তুলেছে জনবসতি। নতুন চরের মধ্যে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, বয়ারচর, জাহাজিয়ার চর, চর রশিদ, দমার চর, ঢালচর, মৌলভীরচর, সাহেবানির চর, চর নুরইসলাম, চর ইসলাম, কেরিংচর, নলের চর, সুবর্ণচর উপজেলার নঙ্গলিয়া, চরবাটা, চর জুবলী, চরক্লাকের দক্ষিণাংশ-সহ কমপক্ষে ২০টি দূর্গম চরের প্রায় ৩ লাখ মানুষ বেড়িবাধ ও বেড়িবাধের বাইরে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব চরে গত এক দশকে অন্তত ৭০ হাজার একর বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েই চলছে। মাত্র কিছুদিন আগেও ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে এসব দ্বীপ ও চরের ৩০ জন মানুষের প্রানহানি ঘটেছিল।
বনবিভাগ জানায়, সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে জানমাল রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৬৭-৬৮ অর্থ বছর থেকে নোয়াখালী উপকূলে ১ লাখ ৪৫ হাজার একর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন শুরু হয়েছিলো। এরপর বিভিন্ন সময় ৩৫ হাজার একর বনভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অবশিষ্ট বনভূমির মধ্যে ৭০ হাজরেরও বেশি বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে জাতীয় উদ্যান নিঝুম দ্বীপসহ সর্বোচ্চ ৪০ হাজার একর বনভূমি।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এই বন কাটা শুরু হয়ে তা চলে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। বন সমৃদ্ধ নোয়াখালী উপক’লে বিভিন্ন বনদস্যু বাহিনী তাদের আস্তনা গাড়ে তোলে। দস্যুরা বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বন উজাড় করে ভূমিহীন, শহরের বিত্তশালী ও স্থানীয় জোরদারদের কাছে তা বিক্রি করতে থাকে। এভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উপকূলীয় বনভূমি।
সুবর্নচরের চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম সেলিমের মতে, পুরাতন চরক্লার্ক ইউনিয়নের বেড়ির বাইরের ৮টি চরে যদি কোন বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে তাহলে মুহুর্তেই মারা যাবে কয়েক হাজার মানুষ এবং সম্পদেরও ক্ষতি হবে ব্যাপক।
দুর্যোগকালীন এসব এলাকার মানুষের আশ্রয় নেবার কোনো স্থান নেই। এসব চরের মধ্যে মাত্র কয়েকটি চরে হাতে গোনা কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তাও ঝুকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নয়। অন্য চরগুলোতে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ আসলে এসব চর বিরাণভূতিতে পরিনত হবে।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আনম সেলিম বলেন, সেদিনের দু:সহ স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না। রমজান মাসে আসরের সময় থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও বাতাস বইতে শুরু করে। রাত ১০টার পর থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করে। অনেক মানুষ, সম্পদ, গবাদী পশু প্রবল জোয়ারে ভেসে যায়। সকালে দেখি লাশ আর লাশ। তখন আমি চাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলাম। সাবেক স্পিকার মরহুম মালেক উকিল, সহিদ উদ্দিন এস্কেন্দার কচিসহ একটি টিম চরাঞ্চলে নিহতদের সৎকার, রিলিফ টিম করে এক মাসেরও বেশি সময় আমরা অসহায় মানুষদের মধ্যে রিলিফ বিতরণ করি।
’উপকূলের বেশিরভাগ এলাকাই এখন অরক্ষিত। বনাঞ্চল কাটা হয়েছে, বেড়ি নেই, গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মানুষের বসতি। সেরকম কিছু হলে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য সত্তর সালের মত হবে না, কারণ তখন এতটা প্রযুক্তি ছিলো না, তথ্য আদান প্রদানে জটিলতা ছিলো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো দূর্বল।’ বললেন খায়রুল আনম সেলিম।
- আবু নাছের মঞ্জু