সর্বশেষ

কোম্পানীগঞ্জে বাপেক্সের গ্যাস কূপ খনন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

মো. শরফুদ্দিন শাহীন, কোম্পানীগঞ্জ থেকে:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামে সুন্দলপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সোমবার বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। গ্যাস কুপ খনন প্রকল্প এলাকার জমির মলিকরা আমন ও রবি শষ্য ক্ষতি পুরণের দেয়া চেকের টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উত্তলোন করতে না পারায়, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকবাসী।
নোয়াখালী জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ওই সকল চেক ভূমি মালিকদের ৪ এপ্রিল তারিখে প্রদান করেন। চেকের টাকা বিতরণে নোয়াখালী এল,আর শাখা ও এ,জি শাখার সঠিক নির্দেশনার এবং ছাড়পত্র না থাকায় চেক প্রাপ্তদেরকে টাকা দেয়নি ব্যাংক শাখা গুলো। এতে জমির মালিকরা চেক জমা দিয়ে ১৮ এপ্রিল তারিখেও টাকা উত্তোলন করতে না পারায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সোমবার সকালে কুপ খনন প্রকল্প এলাকায় গভীর নলকুপ স্থাপন, মাটি ভরাট, রাস্তা নির্মান কাজ ও পাকা ড্রেন নির্মান কাজসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরী কাজ বন্ধ করে দেয়। এব্যাপারে ব্যাপেক্সের উপসহকারী প্রকৌশলী সারওয়ার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছায়েদসহ সংশ্লিটরা  ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। 

কোম্পানীগঞ্জের সুন্দলপুর কুপে ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জল সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে সরকারি মালিকানাধীন একমাত্র গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানী বাপেক্স এ কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। 

বাপেক্স সূত্র থেকে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহজাদপুর গ্রামে সুন্দলপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন নামে ওই প্রকল্পে প্রায় ৭৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্লক ১৫-এর অন্তর্গত এ প্রকল্প এলাকাটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে বহুজাতিক কোম্পানী কেয়ার্ন এনার্জি এক্সপ্লোরেশন (বাংলাদেশ) প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর ওই স্থানে গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে পেট্রোবাংলাকে রিপোর্ট দিয়েছিল। তাদের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিঃ (বাপেক্স) এর পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্পটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০০৮ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর অনুমোদন করে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩০ মাস। প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৬৫লাখ টাকা। এর ২৫.৬ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা স্থানীয় মুদ্রায় এবং ৭৪.৩৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। প্রকল্পের আওতায় কেয়ার্ন কর্তৃক চিহ্নিত এলাকায় ২ ডি সাইসমিক সার্ভে পরিচালনার মাধ্যমে আহরিত উপাত্ত ও নমুনা বিশ্লেষণ করে কূপ খননের স্থান চিহ্নিত করার পর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিটার (সাড়ে তিন কিলোমিটার) গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন এবং কূপ পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এ খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন বাণিজ্যিক লাভজনক হবে কিনা তা চুড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে তারা জানান।

প্রাথমিক তথ্য  অনুসারে কারিগরি ও বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন লাভজনক বিবেচিত হলে উৎপাদন কূপ খনন এবং গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২ডি সাইসমিক সার্ভে শুরু করা হয় এবং ইতোমধ্যে এ সার্ভে কার্যক্রম শেষে হয়। সার্ভেতে প্রাপ্ত উপাত্ত ও নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই বাপেক্সের কারিগরি দল সাড়ে তিন কিলোমিটার গভীর অনুসন্ধান কূপ খননের স্থান চিহ্নিত করেছে। স্থান চিহ্নিতকরণের পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এবং কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে ২০১০ সালের চলতি এপ্রিল থেকে কূপ খনন স্থানে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও খনন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ এবং একই বছরের জুন-জুলাই থেকে কূপ খনন কাজ শুরু হবে। কূপ খননের পর কূপ পরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন হতে আগামী ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর নাগাদ সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। পরবর্তী পর্যায়ে গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন এবং জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে পাইপ লাইন স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্ল্যান্ট ও পাইপ লাইন স্থাপনে আরও অতিরিক্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের দুই ধাপে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। এরফলে মোট ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাথমিক মজুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। বর্তমান বাজার মূল্যে উত্তোলিত গ্যাসের আনুমানিক মূল্য তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত হলে আগামী ২০১১ সালের শেষ নাগাদ জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। নোয়াখালীসহ দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক বিকাশে এ গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

মো. শরফুদ্দিন শাহীন

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.