এনায়েতপুর গ্রামে গ্যাস ফিল্ডের সামনে মঙ্গলবার তেল-গ্যাস উত্তোলনে গঠিত সংগ্রাম কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে মানববন্ধনে বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং এলাকার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন শেষে সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ফারুক আল ফয়সল জানান, তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সরকার ১৯৬৯ সালে বেগমগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুরে দুটি এবং কাশীপুরে একটি কূপ খননের কাজ শুরু করে। এরপর ১৯৭৩ সালে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে রাশিয়ান তেল গ্যাস কোম্পানি উৎপাদন অংশীদারী (পিএসসি) চুক্তি সম্পাদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে রাশিয়ান বিশেষজ্ঞদের তত্বাবধানে এনায়েতপুরে ১নং এবং কাশীপুরে ৩ নং কূপের কাজ শুরু করা হয়। এতে ১ নং কুপে ৩৮ মিটার ও ৩ নং কূপের ২৫ মিটার গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে এটিকে ৮ টি জোনে ভাগ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ১ নং কূপে সঠিক পরীক্ষা না করে সেখানে তেল গ্যাস নেই বলে ঘোষনা দেওয়া হয়। ৩নং কূপে একই ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়। এমনকি ২ নং কূপে খনন না করে উক্ত এলাকাকেও তেল ও গ্যাসবিহীন বলে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। ১৯৭৮ সালে বেগমগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে পেট্রোবাংলার একজন উর্ধ্বতন জিওলোজিস্টের তত্বাবধানে ১ নং কূপের পাইপের অভ্যন্তর ভাগের সিমেন্ট অপসারনের কাজে হাত দেওয়ার পর মাত্র অল্প কিছু পরিমান সিমেন্ট অপসারন করে ঐস্থানে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ছয় ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসর প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছিলো।
বিগত জোট সরকারের শেষ পর্যায়ে ১০ নাম্বার ব্লকের ইজারা প্রাপ্ত বিদেশী কোম্পানী কেয়ার্ণ এনার্জি বাপেক্সের নিয়ন্ত্রাধীন বেগমগঞ্জের এনায়েতপুরের এ গ্যাস ফিল্ডে এক ভূতাত্বিক জরিপ চালিয়ে তিনটি সম্ভাবনা কাঠামোয় ন্যূনতম স্তরে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকার কথা জানায়। পরবর্তীতে দেশীয় কোম্পানীগুলোর মাধ্যমে এ গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তখন।
২০০৬ সালে তৎকালীন জ্বালানী উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মিডিয়ার সাথে স্বাক্ষাতকারে বলেছিলেন, দেশীয় কোম্পানী সিলেট গ্যাস ফিল্ড ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এ গ্যাস উত্তোলন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে বাপেক্স তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দিবে। তাদের কাছ থেকে সরকার গ্যাস কিনে নিবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের কোম্পানীগুলোকে আর্থিক এবং প্রযুক্তি দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেলে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোম্পানীগুলো অবদান রাখতে পারবে।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের এনায়েতপুরের এ গ্যাসফিল্ডটি পুনরায় খনন করে উত্তোলিত গ্যাস এ অঞ্চলের গ্যাস নির্ভর শিল্প স্থাপনে সহায়ক হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক পর্যায় থেকে যেকোন ধরণের ঝুঁকি কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণেরও দাবি জানান তারা। পাশাপাশি গ্যাসফিল্ডটি অরক্ষিত থাকার কারণে স্থানীয় জনসাধারণের যাতায়াত বিশেষ করে শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করার কারণে যেকোন সময়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে।
এনায়েতপুরের আবদুস সোবাহান মেম্বার জানান, তার বাড়িতে ২০০৫ সালে টিউবয়েল স্থাপনের সময় থেকে পানির সাথে গ্যাস নির্গত হতো। পরে ওই গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজও করা হতো। এখনো কার্তিক মাস থেকে পুরো শীতকাল গ্যাসের চাপ থাকে।
এদিকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বেগমগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের খনন কূপের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
- আবু নাছের মঞ্জু