সর্বশেষ

ছোট ফেনী নদীতে মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণ কাজে তিন দফা বিফলতা

কাজ শেষ করার তিন ঘন্টার মাথায় ভেঙ্গে গেল নদীতে

আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী:
তিন দফা চেষ্টার পরও সম্পন্ন করা গেল না নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ছোট ফেনী নদীর ওপর মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণ কাজ। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে ছয় সহস্রাধিক শ্রমিকের অক্লান্ত শ্রমে নির্মিত ক্লোজারটি মাত্র তিনঘন্টা স্থায়ী হয়। বিকেলে সন্দীপ চ্যানেলের মোহনায় জোয়ারের তীব্রতায় ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘের ক্লোজারের ১৫০ ফুট অংশ ভেঙ্গে যায়। যার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারের মধ্যে নদী ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭০ মিটার প্রস্থে প্রথমে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে আইএইচ-এ্যাটকো-ওয়েল(জেভি) ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চুক্তিতে ছোট ফেনী নদীর কোম্পানীগঞ্জে মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু তারা কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড’ (বিডিপিএল) ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা চুক্তিতে দ্বিতীয় দফায় ক্লোজারের কাজ শুরু করে। ওই সময় ক্লোজিং পয়েন্টে একটি জাহাজ ডোবানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায়ও নির্মাণ কাজটিতে সফল হয়নি। পরবর্তীতে জরুরী ভিত্তিতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেটর আওতাভুক্ত করতে আরও ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার চাহিদা পাঠালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১৭৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলে তৃতীয় দফায় কাজ শুরু করা হয়। গত শনিবার সকাল থেকে ছয় হাজারের অধিক শ্রমিক নিয়োগ করে দুপুর ২.১০ ক্লোজারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু তিনঘন্টা যেতে না যেতেই বিকেল ৫.১০ প্রবল জোয়ারে সেটিও ভেঙ্গে যায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন- সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজটি না করা ও নকশায় ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে। যার কারণে মুছাপুর, কদমতলী বাজার, তালতলি বাজার, ফাজিলের ঘাট বাজারসহ কোম্পানীগঞ্জের চরাঞ্চল ও ফেনী জেলার কিছু অংশে ভাঙ্গন দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে ছোট ফেনী নদীর উপর মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে নোয়াখালীর ও ফেনী জেলার উপকূলীয় ব্যাপক এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে, জলাবদ্ধতা নিরসন হবে, সীমিত সেচ সুবিধা সৃষ্টি হবে, লবনাক্ত পানি প্রবেশ রোধ হবে এবং প্রকল্প এলাকায় সাধারণ মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। প্রকল্পটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে প্রকল্প এলাকায় শস্য নিবিড়তা ১৫৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২২০ শতাংশে পৌঁছবো। এতে বার্ষিক অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১১৩ মে. টন, যার বাৎসরিক উৎপাদন মূল্য ৪ কোটি ৯২ হাজার ২২ টাকা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল জানান, যদি এ প্রকল্প সঠিকভাবে ও সফলতার সাথে সম্পন্ন করা যায় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষ কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। ফিরে পাবে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। মুক্তি মিলবে ভাঙ্গন থেকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আই এম রিয়াজুল হাসান জানান, এর আগেও দুই দফায় মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণের চেষ্টা করে সফল হওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি পনুরায় হাতে নেওয়া হয়। সময়মত ক্লোজারটির নির্মাণ কাজও শেষ করা হয়। কিন্তু শনিবার বিকালে প্রবল জোয়ারের পানির চাপে তিন ঘন্টার মাথায় ক্লোজারটি ভেঙ্গে যায়। তবে আগামী ২৬-২৭ মার্চ ক্লোজারটির ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পুননির্মাণের লক্ষ্যে আট-ঘাট বেঁধে নামা হবে। ওইদিন বালির বস্তার পাশাপাশি ভারি ব্লক নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.