সর্বশেষ

শৈশবেই অতিরিক্ত ওজন এড়াতে হবে


লোকসংবাদ ডেস্ক:

আজকের যুগে অতিরিক্ত ওজন এক বড় সমস্যা৷ ক্ষুধা ও পেট ভরার অনুভূতি অনেকেই ভুলতে চলেছে৷ ফলে মাত্রাজ্ঞান ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বোধের অভাব দেখা যাচ্ছে৷ জার্মানিতে এক হাসপাতাল বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে৷
মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সমস্যা আজ সমাজে বিশাল আকার নিয়েছে৷ জার্মানির প্রায় অর্ধেক মানুষের ওজন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি৷ শিশু ও কিশোরদের এক পঞ্চমাংশ অত্যন্ত মোটা৷ ডাক্তার হিসেবে ড. ক্রিস্টিয়ান  ফালকেনব্যার্গ বলেন, ‘‘গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকের তুলনায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারি হিসেবে গণ্য করছে৷''

আমরুম দ্বীপে একটি হাসপাতালে ডাক্তার ও থেরাপিস্টরা অতিরিক্ত ওজনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছেন৷ সেখানে স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেতে উপবাসের বদলে খাওয়াদাওয়া ও খেলাধুলা করতে হয়৷ যেমন ইয়ান হাতেনাতে এর ফল পেয়েছে৷ চার সপ্তাহ আগে তার উজন ছিল ৯০ কিলোগ্রামের বেশি৷ বন্ধুরা যখন অঙ্ক কষতে ব্যস্ত, তখন সে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে শিখছে৷ সে বলে, ‘‘বাড়িতে বেশিরভাগ সময়ে পাস্তা খাওয়া হয়৷ স্প্যাগেটির নানা পদ৷ তার উপর আমি বরাবর বেশি খেয়েছি৷ ফলে অতি দ্রুত খুব মোটা হয়ে গিয়েছিলাম৷'' ১৭ বছরের এই কিশোর এখনো খেতে বড় ভালোবাসে৷ তবে চারবেলা খাবারের মাঝে ফাঁকে চটজলদি কিছু খাবার অভ্যাস সে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে৷ তার মতে, ‘‘প্রথম তিন দিনে সব সময়ে শুধু খিদে পেতো৷ তারপর অভ্যাস হয়ে যায়৷ আমার পেট আবার ছোট হয়ে গেছে৷ এখন আর অত খাবার ঢোকে না৷''

নজরদারির মধ্যে খাবারের প্রশিক্ষণ চলছে৷ ছোট চামচ দিয়ে ছোট এক পাত্র স্যুপ খেতে হবে৷ ইয়ানকে শিখতে হবে, যে অবসাদের কারণে এবং মূল খাবারের সময়ের ফাঁকে কিছু খেলে চলবে না৷ প্রশিক্ষক স্ভেনইয়া বোন বলেন, ‘‘বাচ্চাদের এমন অভ্যাস করাতে চাই, যা তারা সত্যি প্রয়োগ করতে পারে৷ কী খাবে, তারা নিজেরাই যাতে তা স্থির করতে পারে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে শেখাতে চাই৷ বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক৷ তারা নিজেরাই বলবে, যথেষ্ট হয়েছে আর নয়৷ খিদে পাওয়া ও পেট ভরার অনুভূতি আবার জাগিয়ে তুলতে হবে৷''

ইয়ান এখন জানে, ঠিক কতটা খাবার তার জন্য যথেষ্ট৷ দুই বড় টুকরো মাংস, একমুঠো শাকসবজি বরাদ্দ রয়েছে৷ বাড়িতে ফিরেও সহজ এই হিসেব সে চালু করতে চায়, যাতে হারানো ওজন আবার ফিরে না আসে৷ ইয়ান এখন ব্যায়াম করছে৷ অথচ আগে সে অবসর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে কম্পিউটার গেমস খেলতেই বেশি ভালোবাসতো৷ সেটা যে ভালো নয়, সেই উপলব্ধিও হয়েছিল৷ তবে একা সেই অভ্যাস ত্যাগ করা তার জন্য কঠিন ছিল৷ ক্রীড়া শিক্ষক ইমো ক্রেমস বলেন, ‘‘আমার মনোভাব হলো, শিশুদের বলে দাও যে তারা কোনোকিছু করতে বাধ্য নয়৷ নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে পারে৷ সেটা তাদের মনে ধরে৷ সেই বোঝাপড়া অনুযায়ী অগ্রসর হই৷ খুব মজা হয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা যায়৷'' ইয়ান দিনে তিনবার জিমে যায়৷ নতুন এই জীবনে খেলাধুলা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে৷ সে বলে, ‘‘এখন আমার আরও খেলাধুলার প্রয়োজন৷ আগেও খেলাধুলা ভালো লাগতো বটে, কিন্তু আমি বড় কুঁড়ে ছিলাম৷ স্কুলে সারাদিনের পরিশ্রমের পর খেলাধুলাকে বোকামি মনে হতো৷''

আম্রুম দ্বীপে ইয়ান-এর শেষ দিন৷ সে জানে, বাড়ি ফিরলে হাজারটা প্রলোভন অপেক্ষা করে রয়েছে৷ কিন্তু পুরানো অভ্যাস ত্যাগ করতে এখন সে অনেক বেশি প্রস্তুত৷ সে বলে, ‘‘সপ্তাহে শুধু এক দিন কঠিন পরিশ্রম করতে হয় না৷ ক্লান্তির কারণে সপ্তাহে কয়েক দিন কিছুই করা হচ্ছে না, এমনটা হতেই পারে৷ তখন আবার তা নিয়ন্ত্রণ করতে  হয়৷'' নতুন জীবনের সূচনা৷ ৪ সপ্তাহে ইয়ান শুধু ১০ কিলো ওজন কমায়নি, আত্মমর্যাদার এক নতুন বোধ সে গড়ে তুলেছে৷ তার লক্ষ্য কী? ‘‘অবশ্যই ৭০ কিলোয় ফিরে যেতে চাই৷ তখন স্বাভাবিক ওজন হবে৷ তখন পেশি আরও শক্তিশালী করতে পারি৷ আদর্শ সৌন্দর্যের পথে এগোতে পারি৷''
#
সূত্র: ডিডব্লিউ

লোকসংবাদ | Loksangbad | The First Bangla Online Newspaper from Noakhali সাজসজ্জা করেছেন মুকুল | কপিরাইট © ২০২০ | লোকসংবাদ | ব্লগার

Bim থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.