জমিজমা বিক্রি করে সেলিম চৌধুরীকে বিদেশে পাঠিয়েছিলো পরিবার। আশা ছিলো, সংসাদে স্বাচ্ছন্দ্য আনবে লিবীয় দিনার। কিন্তু সেখানে এ যুবকের মৃত্যুতে ভেঙে গেছে আশা। এখন সন্তানের লাশটি যেন পাওয়া যায়, সে আশা নিয়ে সরকারের পানে চেয়ে আছেন সেলিমের বাবা-মা।
সংঘাতময় লিবিয়া থেকে পালানোর সময় তিউনিশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সোন্দলপুর ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে সেলিম (২৫)।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার সেলিমসহ দুজন লিবীয়প্রবাসীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
রোববার মালিপাড়া গ্রামে কালামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে মাতম চলছে। সেলিমের মা সবুরা খাতুন বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন। ভাইকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন পারভিন আক্তার ও শিউলি আক্তার।
কৃষক কালামের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সেলিম সপ্তম। বড় পাঁচ ভাই তাদের পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। সেলিমই ছিলেন পিতামাতার একমাত্র অবলম্বন।
কালাম লোকসংবাদকে বলেন, "১০ মাস আগে সেলিমকে বিদেশ পাঠাতে খরচের সাড়ে ৩ লাখ টাকার যোগাড় করতে নিজেদের সবটুকু আবাদি জমি বন্ধক দেওয়ার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে অনেক ধার কর্জ করতে হয়।"
লিবিয়া পৌঁছার পর থেকে সেলিম এ পর্যন্ত মোট ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানান।
"অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। এখন আমার সন্তান-সম্বল, স্বপ্ন সবই শেষ হয়ে গেলো", বলেন কালাম।
এখন যত শিগগির সম্ভব সেলিমের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারে প্রতি দাবি জানান তিনি।
সেলিমের সঙ্গে সর্বশেষ পরিবারের কথা হয়েছিলো গত বৃহস্পতিবার।
কালাম বলেন, "সেলিম বিকালে ফোন করে তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। ওই সময় শরীফ নামে তার এক সহকর্মী আমাকে বললো, 'কয়েকদিন উপোস থাকার কারণে সেলিমের শরীরের অবস্থা ভালো না। আমরা আজ লিবিয়া ছেড়ে তিউনিশিয়া যাচ্ছি, তিন ঘণ্টা পর আপনাদের আবার ফোন দেবো।' কিন্তু পরে আর ফোন দেয়নি তারা।"
"শুক্রবার বিকালে ওই ছেলে (সেলিমের সহকর্মী) ফোন করে জানায়, সেলিম আর নেই", বলেন তিনি।
সেলিমের লাশ দেশে আনার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানা আছে কি না- জানতে চাওয়া হলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম রোববার বিকালে লোকসংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে কিছু তার জানা নেই।
পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস শনিবার বলেছিলেন, সেলিমসহ অন্য জনের লাশ শিগগির দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।
- আবু নাছের মঞ্জু